চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ যেন ‘শক্তিশালী’ দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সোমবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে ব্লিংকেন এ প্রত্যাশার কথা জানান। তিনি বলেন, বিশ্ব বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। অবশ্যই আমরা চাইছি যে যাতে তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই অঞ্চল ও বিশ্বে জোরালো উদাহরণ তৈরি করুক।
ওয়াশিংটন সময় সোমবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে ব্লিংকেন বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ব্যাপক পরিসরে, যা বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনৈতিকভাবে, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসহ প্রভৃতি খাতে দুই দেশ একযোগে কাজ করে আসছে।
মিয়ানমারে সেনা নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ব্লিংকেন।
তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবাধিকারের পাশাপাশি সম্পর্ককে শক্তিশালী ও গভীর করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে বহুমুখী, গতিশীল ও বিস্তৃত সম্পর্ক। গত ৫০ বছরে আমরা বেশ ভালো করেছি এবং আগামী ৫০ বছরের দিকে তাকিয়ে আছি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশীদারিত্বের আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ‘শক্তিশালী’ ও মজবুত’ করার লক্ষ্যে এই সফর জানিয়ে মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বে বাংলাদেশ গর্বিত এবং আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো দিন আসে।
বৈঠক শেষে ওয়াশিংটনে হোটেল ওমনি শোরেহামে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছে। আমরাও অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই এবং আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি, স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ এবং নির্বাচনকালীন ‘সব ক্ষমতা’ দিয়ে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গড়ে তোলার বিষয় বৈঠকে তুলে ধরার কথা জানান তিনি।
এক প্রশ্নে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারাও চান একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক, একটা মডেল নির্বাচন হবে তারা চান। আমরাও মডেল নির্বাচন চাই, আমাদের রক্তে হচ্ছে গণতন্ত্র, রক্তে হচ্ছে ন্যায়বিচার, ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার জন্য। আমরাও চাই।
তবে এ ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য চাই, আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন যাতে আমরা স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানানোর কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, আমরা তোমাদের পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাই। তোমরা আসো। তবে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ শুধু সরকার করতে পারবে না। সেজন্য সব বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদেরকে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকার সব ধরনের পরিবেশ তৈরি করছে, সে কথাও বৈঠকে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যত খুশি পর্যবেক্ষণ পাঠাও। আগে ২৫ হাজার পর্যবেক্ষক ছিল। কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দলীয় মনোভাবাপন্ন কেউ যাতে পর্যবেক্ষক না হয়। র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, আমরা বলেছি হত্যা, নির্যাতন, সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে গেছে এদের কারণে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করার কথাও মন্ত্রী বলেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন।
রোহিঙ্গাদের জন্য তারা আমাদের খুব প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ এটা অভাবনীয় কাজ করতেছে। বলেছেন, তাদের কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দিতে এবং আমরা বলেছি, কিছু দিয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে বলেছে জানিয়ে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বলেছে, প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের ২০ লাখ লোক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, পাঁচ লাখ বিদেশে যায়। বলেছি, আপনাদের এখানে নিয়ে আসেন। আর আপনারা তাদেরকে স্কিল ট্রেনিং দিতে পারেন, আমরা স্বাগত জানাব।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে পাঠানো উষ্ণ বার্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।