চন্দনাইশ প্রতিনিধিঃ
চন্দনাইশে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজীকে পিটিয়ে দোতলা থেকে ফেলে গুরুতর আহত করার ঘটনায় ২ আসামীকে গেফতার করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুর এলাকার টিটি পাড়া রোডের সর্দারপাড়া কলোনির একটি ব্যাচেলর মেসে আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ সূত্রে জানা যায়, পাহাড় কাটার সংবাদ পরিবেশন করায় দুস্কৃতিকারীরা গত ৪ এপ্রিল বিকেলে চন্দনাইশের আরকে শপিং সেন্টারের ২য় তলায় সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘আয়ুব মিয়াজী কম্পিউটার, কমার্শিয়াল এন্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট’ সেন্টারে প্রবেশ করে তাকে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দোহাজারী হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা আবদুল শুক্কর বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় ২জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬/৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজীকে দোতলা থেকে ফেলে দেয়ার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনার বিচার দাবি করে চন্দনাইশ প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে চন্দনাইশসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পর র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ঘটনার সাথে জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুরের সর্দারপাড়া কলোনির একটি ব্যাচেলর মেসে আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি দল ঘটনার ৬ দিন পর আজ সকালে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলার জামিজুরী এলাকার আবদুল মোনাফের ছেলে মো. আলাউদ্দীন (৩৫) ও পূর্ব দোহাজারী এলাকার আবদুল ছবুরের ছেলে মো. ফারুক(২৬)কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার আসামীরা হামলার সাথে জড়িত ছিল বলে র্যাবের নিকট স্বীকার করে।
গ্রেফতার আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার পরপরই আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকে। সর্বশেষ তারা ঢাকা মহানগরীর কমলাপুরের টিটি পাড়া রোডের সর্দারপাড়া কলোনির একটি ব্যাচেলর মেসে আত্মগোপন করেছিল।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন গত ৪ এপ্রিল বিকেলে সাংবাদিক আয়ুব মিয়াজী তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এসময় ৭/৮ জন সন্ত্রাসী হকিস্টিক, ছুরি, লাঠি নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ২য় তলা থেকে নিচে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা।
এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
সাংবাদিক আয়ুব মিয়াজী জানান, দোহাজারী পৌরসভার পূর্ব দোহাজারী এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার সংবাদ উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা এবং এ সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশন করায় পরিকল্পিতভাবে তার ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আজ র্যাবের অভিযানে ঢাকার কমলাপুর টিটি পাড়া রোডের সর্দারপাড়া কলোনি থেকে আলাউদ্দীন ও ফারুক নামে ২ আসামী গ্রেফতার হয়েছে। এর আগে চন্দনাইশের দোহাজারী থেকে বাবু নামের আরো এক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।