চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চার দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস। গতকাল দুপুরে আদালত থেকে জামিনের আদেশ হওয়ার পর সন্ধ্যায় কারামুক্ত হন তিনি। কেরাণীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থাকা শামসের মামাত ভাই ফারুক হাসান খবরটি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বিকালে ঢাকার জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেছিলেন, তার জামিনের কাগজ পাওয়ার পর যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না দেখায় তার জামিনের আর কোনো বাধা থাকল না।
এদিন দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় শামসের জামিন মঞ্জুর করেন। পুলিশ প্রতিবেদন হওয়া পর্যন্ত জামিন বহাল থাকবে।
স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য–উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক।
এ মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং নাম উল্লেখ না করে একজন সহযোগী ক্যামেরাম্যানকেও আসামি করা হয়েছে। মতিউর রহমান রোববার হাই কোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান।
তেজগাঁও থানায় শামসের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসামির আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার জানান, এই মামলায় শামসকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখায়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নেই।
জামিন শুনানিতে যা বললেন আইনজীবীরা : ভুল স্বীকার করে খবরের সংশোধনী দেওয়ার পরও গ্রেপ্তার ও মামলা কেন, চারদিন কারাবন্দি থাকার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের আবার জামিন শুনানিতে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এক আইনজীবী।
‘এ ধরনের অভিযোগে ব্যক্তি মামলা করতে পারে না, রাষ্ট্র পারে’–এমন বক্তব্য তুলে ধরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আশরাফ–উল–আলম বলেন, একজন সাংবাদিকের লেখার দায়ে যদি এই হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতে পারে। মানুষের ভুল ত্রুটি থাকতে পারে।
হাকিম আদালতে প্রথম দফায় নাকচের পর আবার শামসের জামিনের আবেদন করলে গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে শুনানিতে এসব বিষয় সামনে আনেন তার আইনজীবীরা। পরে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক পুলিশ প্রতিবেদন হওয়া পর্যন্ত তাকে ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।
শামসের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী মাহবুবুল হক, আশরাফ–উল–আলম, চৈতন্য চন্দ্র হালদার, সুমন কুমার রায়, বাহাউদ্দিন ইমরান, আমিনুল গণি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু।
শুনানির শুরুতে শামসের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার এজাহার পাঠ করে শুনিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের জামিন শুনানিতে হাই কোর্টের বিচারপতি যা বলেছিলেন সেসব বিষয় অর্থাৎ ভুল স্বীকার করা, পরিবেশিত খবরের সংশোধনী দেওয়া হলে মামলা কেন, প্রেস কাউন্সিলে কেন গেলেন না ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ফুল বিক্রেতা এমন ১২/১৩ জনের বক্তব্য আর একজন দিনমজুরের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ মামলার অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য না। হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে। মামলা না করে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দেওয়া যেতে পারত।
এ আইনজীবী সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রেক্ষিতে ওই খবরটি স্বাধীনতা বিরোধী খবর কীভাবে হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মামলায় বলা হচ্ছে জাল পরিহিত বাসন্তীর ছবির কথা। যখন পত্রিকায় ওই ছবি ছাপা হয় কই তখন তো কেউ এগিয়ে আসেনি?
আইনজীবী আমিনুল গণি বলেন, মামলার একটি ধারা জামিনযোগ্য। মামলায় বলা হলো যে, তাকে ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে ভোর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তার আশুলিয়ার বাসা থেকে। গ্রেপ্তারের অনেক পরে তার বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা হয় এর আগে।
কই এখনও তো সে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত ৬১ ধারায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না। তাকে আদালতে প্রডিউস না করে এ কয়েক ঘণ্টা তাকে কীভাবে রাখা হলো, কোথায় কোথায় নেওয়া হলো তার কোনো উল্লেখ মামলায় নেই।
এসব বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ফুল বিক্রেতা শিশুর মুখ দিয়ে এ কথা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলানো হয়েছে। এ রকম গর্হিত কাজ সাংবাদিকতা নয়। শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করলেই হবে না।
বাসন্তীকে যারা জাল পরিয়ে ছবি তুলেছিল সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিই এ রকম কাজ করেছে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পারপাসলি এটা করেছে। আইনের অধিকাংশ ধারা নন বেইলেবল।