রাউজান প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ও প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর দুই পাড়ে এখন মৎস্যজীবীদের মৌসুমী ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। নদীতে মা মাছের ডিম পাড়ার এমন সময়ে হালদার মুখে বালুবাহী বড় বড় যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী ও হালদার সংযোগস্থলের চর থেকে বালু উঠিয়ে ব্যবসায়ীরা যান্ত্রিক নৌযানে করে হালদার মুখ দিয়ে পরিবহন করছে। হালদা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে হালদার সাথে সংযোগ আছে এমন মিঠা পানির নদী ও জলাশয় থেকে ডিম–সম্ভবা মা মাছ নিরাপদে ডিম পাড়তে হালদায় আসে।
মাছের প্রজনন মৌসুমে হালদার মুখে যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত উদ্বেগজনক। নদীপাড়ের মৎস্যজীবীরা বলেছেন, নদীর মুখে প্রতিনিয়ত যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের কারণে নদীর ডলফিন ও মা মাছ মারা যাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায়, কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সংযোগস্থলে বিশাল বালু মহল ভাগ করে প্রতি বছর সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ইজারাদাগণ নদীতে শক্তিশালী ড্রেজার ফেলে রাত–দিন বালু তুলে বড় বড় যান্ত্রিক নৌযানে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করছে। বালুর বড় একটি অংশ হালদার মুখ হয়ে নেওয়া হয় কালুরঘাট ও মোহরার বিভিন্ন পয়েন্টে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মতে, হালদা নদীতে এ পর্যন্ত যত ডলফিন ও মা মাছের মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যে বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে নদীর মুখে চলাচলকারী নৌযানের পাখার আঘাতে। আঘাতপ্রাপ্ত কিছু কিছু ডলফিন ও মা মাছ বিচরণ শক্তি হারিয়ে নদীর মাছ চোরদের পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে।
জেলেদের এই মত সমর্থন করে হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কার্পজাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রভাবে আক্রান্ত।
অন্যদিকে দূষণ, নদীর যান্ত্রিক দানব, মৎস্য সম্পদ দস্যুতার মতো মানব সৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত। তিনি মনে করেন, হালদার মুখে নৌযানের উৎপাত দ্রুত বন্ধ করার পাশাপাশি নদীর দূষণ উৎসগুলো চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নদীতে রাতে জাল নিয়ে তৎপর দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনিক অভিযান চলমান রাখতে হবে। হালদাপাড়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে হালদার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও হালদা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, মৎস্য প্রজনন মৌসুমে হালদা নদীর মুখে যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের ঘটনা উদ্বেগজনক।
প্রতি বছর নিরাপদ প্রজননে বিভিন্ন নদী থেকে মা মাছ হালদায় প্রবেশ করে। মাছের নিরাপত্তায় নদীর বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। তিনি বলেন, নদীর প্রবেশমুখ নৌযানমুক্ত রাখতে নৌ পুলিশের জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার।
দুটি নদীর সাথে থাকা বালু মহাল ইজারা দেয়ার প্রভাব হালদায় পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালু মহাল ইজারা দেয়ার বিষয় নিয়ে জানি না। এই বিষয়টি জেনে ক্ষতিকারক হলে প্রশাসনের কাছে বালু মহালের ইজারা বাতিলের দাবি জানানো হবে।