মহেশখালী প্রতিনিধিঃ
মহেশখালীর আসিফ মোহাম্মদ আফনান। ২১ বছর বয়সী টগবগে এক তরুণ। মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টা খানেক আগেও ফোনে কথা বলছিল মা–বাবার সঙ্গে। মাকে বলছিল এবারের ঈদের পর দেশে ফিরে নতুন একটা বাড়ি করবে। শোধ করবে বিদেশ যাওয়ার সময় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেয়া সব ঋণ।
কিন্তু পরিবারটির সব আশা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে এক নিমিষে। হবে না তাদের নতুন বাড়ি করা। কারণ আসিফ যে আর কোনোদিন দেশে ফিরবে না।
যে খালাতো ভাইয়ের হাত ধরে সৌদিতে পাড়ি জমিয়েছিল সেই খালাতো ভাই শেফায়েত উল্লাহসহ দুই ভাই গত সোমবার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গতকাল মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পূর্ব ফকিরাঘোনা গ্রামে আসিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পিতা আহমদ উল্লাহর আহাজারি।
তিনি জানান, ২ বছর ৩ মাস আগে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে আসিফ জীবিকার তাগিদে সৌদি পাড়ি জমান। অনেকটা ধার দেনা করেই জীবনের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আসিফকে পাঠানো হয়েছিল বিদেশ। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সে ছিল দ্বিতীয়। তার খালাতো ভাই সাইফুল ইসলাম ও শাহাজাহান ইসলাম আগে থেকেই সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।
দুবছর আগে তাদের অপর ভাই শেফায়েত উল্লাহকেও নিয়ে যান সেখানে। তারা তিন ভাই সৌদি আরবের আবাহা ডিস্ট্রিকের কামিছে আবাসিক হোটেলে চাকরি করতো। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি জানান, মাত্র ২২ বছর বয়সের অতি নম্র ভদ্র শান্ত প্রকৃতির আমার ছেলেটিও তাদের সঙ্গে হোটেলে কাজ করতো।
গেল সপ্তাহে রোজা উপলক্ষে টাকাও পাঠিয়েছিল সে। মাকে বলছিল এ মাসের বেতনের বাদবাকি টাকা দিয়ে সে ওমরা করতে যাবে। গত সোমবার ইফতারের আগে ফোন করে আমাকে জানায়, তার খালাতো ভাই শেফায়েতসহ তারা এখন মক্কায় রওনা দিতে গাড়িতে উঠছে।
আমাকে বলে মোবাইলে এমবি ঢুকিয়ে রাখতে, কথা হবে মক্কায় গিয়ে। আমি এমবি ঢুকিয়ে রেখেছি। এখন আমার ছেলে নেই। ছেলে আর কথা কয় না বলে আবার মূর্ছা যান তিনি।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, নিহত আসিফসহ তার খালাতো ভাই শেফায়েতের লাশ যেন দেশে আনতে পারে সেজন্য সরকারিভাবে সহায়তা চান তারা।