চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপজ্জনক রাসায়নিকের বিস্ফোরণে জনজীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি। একই সাথে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ রোধে জাতীয় কমিটি চায় রসায়ন সমিতি।
দেশ যখন প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক বিস্ফোরণ, দুর্ঘটনা আমাদের জাতীয় অগ্রগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ রসায়ন সমিতি সংবাদ সম্মেলনে এসব বিস্ফোরণ রোধে আন্তর্জাতিক মানের অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণসহ সমিতির পক্ষে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামপ্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে রাসায়নিক ও গ্যাস বিস্ফোরণ রোধ করতে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণসহ শিল্প কারখানা তদারকিতে জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে রসায়ন সমিতি।
রসায়ন সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জয়নাল আবেদীন সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমিতির সভাপতি সাবেক যুগ্ম সচিব মো. জাফর আলম। আলোচনা করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, চট্টগ্রাম কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান ড. সামসুদ্দীন আজাদ, সমিতির চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. রেয়াজুল হক এবং সমিতির সদস্য বিসিএসআইআরের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ড. শ্রীবাস চন্দ্র ভট্টাচার্য।
সমপ্রতি দুর্ঘটনার তদন্তে ‘অনেক কমিটি’ করায় সমন্বয়হীনতা তৈরি হয় বলেও মনে করেন সমিতির সদস্যরা। সমিতির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি জাফর আলম বলেন, দুর্ঘটনার পরে মনিটরিং করার চেয়ে আগে করাটা জরুরি। সঠিক তদারকির অভাবেই দুর্ঘটনা ঘটে। কারখানাগুলোতে দক্ষ জনবলের সঙ্কট আছে। ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনা সচেতনতা ও মানসম্মত ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের অভাবে ঘটেছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব করছি ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেশন কমিটি করার। যারা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইনকে গাইডলাইন হিসেবে ধরে কাজ করবে। এই কমিটি ক্যাবিনেট ডিভিশনের অধীনে সরাসরি কাজ করতে পারে। তাহলে এরকম বিচ্ছিন্ন তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ না হয়ে সমন্বিতভাবে হবে।
ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে সালফিউরিক এসিডবাহী গাড়ি চলছে যাত্রীবাহী গাড়ির পাশেই। কিন্তু শনাক্তকরণ সংকেত না থাকায় আমরা কেউ জানতেও পারছি না।
সড়কপথে এভাবে রাসায়নিক পরিবহণ অত্যন্ত ঝুঁকির। এর জন্য আন্তর্জাতিক গাইডলাইন আছে। তা অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
দেশে শিল্পের প্রবৃদ্ধির কারণে রাসায়নিক আমদানি আরও বাড়বে জানিয়ে জাফর আলম বলেন, এখন পরিস্থিতি এমন যে দায়ী যেন রাসায়নিক উপকরণ। যেমন বিএম ডিপোর ঘটনার পর হাইড্রোজেন পার অঙাইড রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেল। এই ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের ও মিল–ফ্যাক্টরি কিংবা রাসায়নিক কারখানায় সম্পৃক্ত শ্রমজীবী মানুষের দক্ষতা ও সচেতনতা থাকা অত্যাবশ্যক।
বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির আঞ্চলিক কমিটি বিপজ্জনক কেমিক্যালস ও বিষাক্ত পদার্থের হ্যান্ডেলিং, পরিবহন, বিতরণ, স্থানান্তর, ব্যবহার ও গুদামজাতকরণে এ যাবৎকালে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে সুপারিশমালা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে–বিপজ্জনক কেমিক্যালস ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ হ্যান্ডলিংয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম অনুসরণ করা।
কঠিন, তরল, বায়বীয় সব ধরনের পদার্থের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দরকার। এ বিষয়ে সরকারি বা স্থানীয় সরকারের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অবগতি থাকা আবশ্যক। হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা দক্ষ ও শিক্ষিত ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম প্রস্তুতি থাকতে হবে। হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অগ্নিনির্বাপণের সুবিধাদি থাকতে হবে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কিংবা গুচ্ছ প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অ্যাম্বুলেন্সের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বিপজ্জনক রাসায়নিক গ্যাস, তরল যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, আন্তর্জাতিক বিধি মোতাবেক পরিবাহিত হতে হবে। এলএনজি, এলপিজি, বিভিন্ন ধরনের এসিড, গ্যাসীয় পদার্থ ট্রাক ও লরিতে পরিবাহিত হয় ঝুঁকি ও বিপদকে সঙ্গে নিয়ে।
পরিবহনের সময় এসব পণ্যের নাম, ইউএন নম্বর, পণ্যের বিপদ সংক্রান্ত বর্ণনা প্রতীক চিহ্ন প্রদর্শন করতে হবে। কঠোরভাবে তা মনিটর করতে হবে।
বিপজ্জনক পদার্থ পরিবহন করতে আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিধি অনুসরণ করতে হবে। জাতিসংঘ, আইএমও, আইএটিএ এবং জাতীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা যাদের অন্যতম।