চট্টগ্রামঃ
ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা এবং উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের লাইফ এবং ডোনার মেম্বারদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের টাকায় জনগণের হাসপাতালখ্যাত মা ও শিশু হাসপাতালের প্রায় দশ হাজার লাইফ এবং চার শতধিক ডোনার মেম্বার রয়েছেন। যাদের দান অনুদানের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের সহায়তায় মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। মাত্র দশ বেডের আউটডোর কার্যক্রম নিয়ে শুরু হওয়া হাসপাতালটি বিগত চল্লিশ বছরে ৮০০ বেডের পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে পরিচালিত হাসপাতালটির লাইফ এবং ডোনার মেম্বারদের সম্মানিত করতে ব্যাপক আয়োজনে করা হয় মিলনমেলা।
হাসপাতালটির চল্লিশ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মিলন মেলায় কয়েক হাজার সদস্য অংশগ্রহণ করেন। এদের পাশাপাশি হাসপাতালের বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারী এবং অতিথি মিলে হলভর্তি মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
শনিবার রাতে নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মিলন মেলায় হাসপাতালের অতীত নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নিয়েও কথা হয়। হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এম এ তাহের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কন্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারী মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডোনার) সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন। বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ নেতা এম এ সালাম, সাবেক লায়ন জেলা গভর্নর রফিক আহমেদ, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, হাসপাতালের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারী ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, সাবেক পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এন আই খান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মো. শহীদ উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী, সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের এডভাইজার মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ডা. মো. রেজাউল করিম, আশফাক আহমেদ, আমিনুর রহমান ও স্লোগান পত্রিকার সম্পাদক মো. জহির। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান।
আজকের এই বিপুল উপস্থিতি মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসারই প্রকাশ ঘটিয়েছে। তিনি নিজে হাসপাতালের একজন আজীবন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, এমন অনন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে আমি গর্ববোধ করি এবং আজকের মিলন মেলায় সামিল হতে পেরে আনন্দিত।
চট্টগ্রামই শুধু নয়, দেশের চিকিৎসা সেবার জগতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল একটি ভরসা এবং আস্থার জায়গা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আমরা মা ও শিশু হাসপাতালের অধীনে একটি আন্তর্জাতিকমানের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। এই ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণে ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তিনি সকল আজীবন সদস্য ও চট্টগ্রামবাসীকে এই ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। প্রত্যেককে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সহযোগিতার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো দানকে আমরা ছোট করে দেখবোনা।
আমরা চাই সকলের সম্পৃক্ততা। কেউ ১ টাকা দান করলেও আমরা তা সানন্দে গ্রহণ করব। অনুষ্ঠানে কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. মো. পারভেজ ইকবাল শরীফ, জয়েন্ট জেনারেল (ডোনার) আজিজ মো. নাজিম উদ্দিন, ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, জয়েন্ট ট্রেজারার এস এম কুতুব উদ্দিন, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, স্পোর্টস এন্ড কালচারাল সেক্রেটারি মো. আহসান উল্লাহ, ডোনার সদস্য মো. শহীদউল্লাহ, সদস্য ডা. আবু তৈয়ব, প্রফেসর ডা. কামরুন নেসা রুনা, খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, ডা. ফজল করিম বাবুল, প্রফেসর ডা. জাহিদ হোসেন শরীফ, মো. হারুন ইউসুফ, এ এস এম জাফর, ছৈয়দ ছগির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কন্ঠশিল্পী আবদুল মান্নান রানার পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। পরে উৎসবমুখর পরিবেশে র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোটর সাইকেল, এসি, এলইডি টিভি এবং ফ্রিজসহ মূল্যবান ৫১টি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
র্যাফল ড্র’র টিকেট বিক্রির পুরো টাকাটাই ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার তহবিলে প্রদান করা হয়েছে। ব্যাপক খাওয়া–দাওয়াসহ র্যাফল ড্রর সব আয়োজনই নির্বাহী কমিটি, লাইফ মেম্বার ও ডোনার মেম্বারদের স্পন্সরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।