চবি প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ৬জন, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ও বিভিন্ন হলের ১০জন আবাসিক শিক্ষকসহ ১৮পদে ১৬জন শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
এর ঘণ্টা খানেক পরেই নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আজিম সিকদারকে। একইসাথে দুইজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়ে উপাচার্য ও প্রক্টর দুই রকম বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টিকে ব্যক্তিগত চাওয়া–পাওয়া থেকে বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
তিনি বলেন, তারা (পদত্যাগকারীরা) ৩ মাস আগে থেকে বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন বিরোধী কথা বলছে। যারা পদত্যাগ করেছে তাদের সবাইকে ড. রবিউল হাসান নিয়োগ দিয়েছে।
তারা যা বলছে সব মিথ্যা। তাদের কিছু এজেন্ডা ছিল একে ওকে প্রোভাইড করবে, হয়তো তাদের ওপরও চাপ ছিল বিভিন্ন জায়গার। আমি তাদের কথায় সায় দিতে পারিনি। তাদের দু’একজনের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু ছিল, সেগুলো এখন বলবো না। দু’একজনের ব্যক্তিগত কিছু চাওয়া–পাওয়াও ছিল।
তাদের একটা দাবি পূরণ না হওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়রদের প্রতি তাদের অবজ্ঞা এসেছে। এর প্রতিফলন তারা ‘দেখে নেবে’ বলেছিল। তিনি আরও বলেন, আমি জানতাম এমন কিছু ঘটতে পারে। তাই ভেতরে ভেতরে আমিও তাদের বিকল্প তৈরি করে ফেলেছি।
উপাচার্যের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, উপাচার্য মহোদয় যা বলেছেন এরকম কিছুই না। আমরা শিক্ষক সমিতির গত নির্বাচনের আগে কিছু দাবি–দাওয়া পেশ করেছি। তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সেলিনা মেমও ছিলেন তখন।
পরবর্তীতে ২০২৩–২৪ কার্য নির্বাহীর নির্বাচনের সময়ও একই বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি সেগুলো আমলে নেননি। সেখান থেকেই মূলত দূরত্ব তৈরি হয়।
যার প্রেক্ষিতে আমি পদত্যাগ করেছি এবং আমার প্রতি আস্থাভাজন যারা ছিলেন। তারাও আমার সাথে পদত্যাগ করেছেন। আমি আরো আগে থেকেই বলেছি অন্য কাউকে দেখতে এ পদে। এর আগে গত ৭ মার্চ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে পদত্যাগ করেন রসায়ন বিভাগের মরিয়ম ইসলাম লিজা, ৯ মার্চ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ড. প্রকাশ দাশগুপ্তকে তাৎক্ষণিক বিনা নোটিশে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তারও আগে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন ড. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। এসব পদত্যাগও গতকালের পদত্যাগের সঙ্গে একইসূত্রে গাঁথা। এছাড়া গত ২ জানুয়ারি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে যান চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান। পরে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
জানা যায়, মূলত কর্মকর্তাদের নানামুখী চাপে কর্তৃপক্ষের সায় না পেয়ে পদ থেকে সরে যান তিনি। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও বর্তমান প্রশাসনের উপাচার্যের ওপর অসন্তোষ হয়েই একযোগে এ পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়।
পদত্যাগকারীরা সবাই দীর্ঘ সময় বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এসময়ে শিক্ষকদের দাবি–দাওয়াসহ নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন তারা। তাদের সেসব বিষয় আমলে না নেওয়ায় এমনটি করেছেন বলে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর জানিয়েছেন।
পদত্যাগকারী কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় আগের কর্তৃপক্ষ প্রক্টরদের সঙ্গে আলাপ করতেন। এখন অনেক কিছুই কিন্তু আমরা জানি না, পরে জানতে পারি এটা হয়েছে।
অনেক সময় আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়। বলা হতো আমরা এটি করিয়েছি বা আমাদের সম্মতিতে এমনটা হয়েছে। আদদে আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা শিক্ষকদের কাছে নানা বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। আমাদের অনেক সুপারিশ সিন্ডিকেটে আলোচ্যসূচি পর্যন্ত করা হয়নি। এজন্য নিজ থেকে সরে গেলাম।
জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে প্রক্টর চাচ্ছিলেন পদ থেকে সরে যেতে। উপাচার্যের অনুরোধে সেটা সম্ভব হয়নি। গতকালের পদত্যাগপত্রও গত সপ্তাহে জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়। মূলত প্রশাসনের ওপর সন্তুষ্ট হতে পারেননি পদত্যাগকারীরা এবং দায়িত্বে থেকেও তাদের কথা আমলে না নেওয়ায় পদত্যাগ করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নূর আহমদ বলেন, ১৮ পদে ১৬ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এতদিন তারা নিজের দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন অ্যাকাডেমিক, পারিবারিক সমস্যা তথা ব্যক্তিগত কারণ জানিয়ে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগকারী শিক্ষকরা হলেন, প্রক্টর প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম, এস এ এম জিয়াউল ইসলাম, রামেন্দু পারিয়াল, শাহরিয়ার বুলবুল, গোলাম কুদ্দুস লাবলু। শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া।
ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক। শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আনাবিল ইহসান, প্রীতিলতার হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রূপা, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এইচএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষক শাকিলা তাসমিন, খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা।
আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক ঝুলন ধর। এরমধ্যে প্রক্টর প্রফেসর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া ও সহকারী প্রক্টর শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময় দুইটি পদে রয়েছেন।