চট্টগ্রামঃ
নগরীতে পাওনা টাকা আদায়ে মোহাম্মদ ফারুক নামে এক রিকশাচালককে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি লোহার তৈরি শিকল ও ২টি তালা। গত শনিবার (৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে কোতোয়ালী থানাধীন।
হাজারি গলি লাইনের শিব মন্দিরের পাশ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন প্রান্ত সিংহ হাজারী (২২), মনি মল্লিক (২২) এবং রাজীব মল্লিক (৩০)। এর মধ্যে প্রান্ত সিংহের বাড়ি নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন হাজারি বাড়িতে এবং মনি মল্লিক ও রাজীব মল্লিকের বাড়ি রাউজানের ডাবুয়ায়। মনি মল্লিক ও রাজীব মল্লিক আপন ভাই।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ ফারুককে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসময় আসামিরা কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। পরে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ ফারুক আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করলে সেই মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশ জানায়, মোহাম্মদ ফারুক পেশায় রিকশা চালক। তিনি নগরীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা চালায়। সিনেমা প্যালেস এলাকায় জাহাঙ্গীরের দোকানে চা খাওয়ার সুবাদে তার সঙ্গে আসামি মনি মল্লিকের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে আসামি মনি মল্লিক তাকে ১০ হাজার টাকার মাছ কিনে সিনেমা প্যালেস এলাকায়
ভ্যানগাড়ি করে মাছ বিক্রি করতে দেয়। পিতার কিডনি জনিত রোগের সংবাদ পেয়ে ফারুক মাছ বিক্রি শেষে বাবলুর গ্যারেজে ভ্যান গাড়ি রেখে তার গ্রামের বাড়ি টেকনাফ চলে যায়। সে দীর্ঘদিন তার পিতার চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় ও গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করায় চট্টগ্রামে আসতে পারেনি। পরে ফারুক
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) চট্টগ্রামে আসে। পরদিন শুক্রবার (৩ মার্চ) রাত ৮টার দিকে আসামি মনি মল্লিক ও প্রান্ত সিংহ হাজারী তাকে পাওনা টাকার জন্য বাকলিয়া থানাধীন বাস্তুহারা এলাকা থেকে হাজারী গলিতে নিয়ে আসে। সেখানে আসার পর তাদের দেওয়া ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বললে ফারুক
পিতার অসুস্থতার কথা জানায়। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা করে পরিশোধ করার কথাও বলে। তবে আসামিরা তাকে পুরো টাকা একসঙ্গে দিতে বলে। মোহাম্মদ ফারুক টাকা একসঙ্গে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামিরা তাকে ওই সময়ে হাজারী লেইনস্থ শিব মন্দিরের পাশে গলির ভেতর রাস্তার ওপর
থাকা একটি বাঁশের সিঁড়ির সঙ্গে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে আসামি রাজীব মল্লিক আসা মাত্রই আসামিরা ফারুককে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি দিয়ে মেরে জখম করে এবং ওই স্থানে আটক করে রাখে।
আসামিরা তাকে এই মুহূর্তের মধ্যে টাকা দেওয়ার কথা বলে, অন্যথায় জানে মেরে ফেলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।