চট্টগ্রামঃ
বিনা দরপত্রে ছাত্রলীগের এক নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৭৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকার মশার ওষুধ কিনেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে এ অনিয়মকে বৈধতা দিতে কৌশল অবলম্বন করেছে সংস্থাটি।
একবারে না কিনে ১৬ লটে ভাগ করে ওষুধগুলো কেনা হয়। এক্ষেত্রে গণখাতের ক্রয়বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) কাজে লাগানো হয়।
এ ধারায় পাঁচ লাখ টাকার নিচে পণ্য ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান করতে হয় না। অভিযোগ আছে, এক প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুবিধা দিতেই ধারাটি কাজে লাগানো হয়েছে। যার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে–মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল। এর স্বত্তাধিকারী চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ–সম্পাদক অরভিন সাকিব ওরফে ইভান। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা দরপত্রে মশার ওষুধ কিনেছে চসিক। এদিকে দরপত্র ছাড়া মশার ওষুধ কেনার অভিযোগ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায় দুদক।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তিনজন সদস্য অংশ নেন। তারা দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজ দপ্তরে ছিলেন। দুদক টিম দোতলায় অবস্থিত মেয়রের একান্ত সচিব এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম কক্ষে প্রবেশ করে তার সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তারা পরিচ্ছন্ন বিভাগের মশার ওষুধ কেনাকাটার ফাইল তলব করেন। পঞ্চম তলা থেকে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা ফাইলপত্র দোতলায় নিয়ে আসেন। পরে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মশার ওষুধ ক্রয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১৬ বারে মোট ৭৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকার ওষুধ ক্রয় করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ ক্রয়কার্য পিপিআর–২০০৮ মোতাবেক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) সম্পন্ন না করে পিপিআর–২০০৮ এর বিধি ৭৪ (১) ও বিধি ৭৭ লঙ্ঘনপূর্বক সামগ্রিক চুক্তি ও ক্রয়াদেশকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংখ্যায় ও মূল্য সীমায় বিভক্ত করেছে।
বেআইনিভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী অরভিন সাকিব ইভান–কে লাভবান করার উদ্দেশ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধদ্ধিতে (ডিপিএম) ১৬ বার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পরিলক্ষিত হয়।
এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, যেসব ওষুধ কেনার বিষয়ে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশ আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কেনা হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছিল।
এরপর এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে ক্রয়পরিকল্পনা করি। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে তা কেনা হচ্ছে।