ফটিকছড়ি প্রতিনিধিঃ
লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারির (ক.) ১১৭তম বার্ষিক ওরশ।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহছুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী (ম.)। মোনাজাতে দেশ–জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।
সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহসুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারীর (ম.) আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় এবং নায়েব সাজ্জাদানশীন ও মোন্তাজেম সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারির (ম.) সার্বিক তত্ত্বাবধানে গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির ওরশে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাইজভাণ্ডারে আসেন আশেক–ভক্তরা।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, চায়না, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানসহ নানা দেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত–অনুরক্ত অংশ নিতে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে আসেন।
সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘অলিগণ রাসূলের প্রতিনিধি। তাদের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ইসলামের ক্রাান্তি লগ্নে সবসময় সুফীসাধকরাই ধর্মের আধ্যাত্মিক ও শরীয়তের অবকাঠামোর রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও বিশ্বাসের সাাথে সমাজ সংস্কৃতির নৈতিক সংস্কারে আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহসুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভাণ্ডারি তরিকা প্রবর্তন করেছেন। মাইজভাণ্ডারি তরিকা ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক রূপ। এ তরিকার অনুসারীরা ঐশি প্রেমনির্ভর শিক্ষা ও ইসলামী শরীয়তভিত্তিক চর্চায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খান অ্যাগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দুল হক খান, ফনিক্স শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সৈয়দ সোহেল হাসনাত ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপ–ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের এবং আওলাদে গাউছুল আজম শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ এরহাম হোসাইন ও শাহজাদা সৈয়দ মানাওয়ার হোসাইন।
আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভাণ্ডারি (শাহ এমদাদীয়া) কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সচিব শেখ মুহাম্মদ আলমগীরের পরিচালনায় ওরশে মিলাদ পরিচালনা করেন দারুত তায়ালীম প্রধান শিক্ষক মওলানা জয়নাল আবেদীন ছিদ্দিকী। ওরশ উপলক্ষে নায়েব সাজ্জাদানশীন ও মোন্তাজেম সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারির (ম.) সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাইজভাণ্ডার ওরশ শরীফ সুপারভিশন কমিটির উদ্যোগে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও ভিডিও চিত্র ধারনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়।
বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় গাড়ি পার্কিংসহ মেহমানদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে থাকা, সময়মতো জামাত সহকারে নামাজ আদায়, বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, আলোকসজ্জা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়াও গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর ওরশ উপলক্ষে সাজ্জাদানশীন হযরত মওলানা শাহসুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারির (ম.) আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় এবং নায়েব সাজ্জাদানশীন মাইজভাণ্ডারি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ডিআইআরআই) ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারির (ম.) সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল-: ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান; দারুল ইরফান শিক্ষা পরিবার সমাবেশ এবং প্রবাসী সদস্যদের পুনর্মিলনী ও তাসাউফ সংলাপ; শিক্ষা উৎসব ২০২৩, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মেলা ও বিজ্ঞান বক্তৃতা এবং বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড; গাউছিয়ত নীতি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ, ছোটদের সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারি বই প্রকাশ, আল বয়ান লিমা ইউশগিলুল আযহান বাংলা প্রকাশ, বেলায়েতে মোতলাকা ইংরেজি ভার্সন প্রকাশ, জ্ঞানের আলো প্রকাশ ও সকল বইয়ের ই–ভার্সন প্রকাশ; ক্লীন এন্ড গ্রীন কর্মসূচী ও খলিফায়ে গাউছুল আজম ও অন্যান্য দরবারের আওলাদগণের উপস্থিতিতে তাসাউফ সংলাপ; রক্তদান কর্মসূচি, ব্লাড ডোনার্স পুনর্মিলনী ও সেমিনার; স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ; শিক্ষক সমাবেশ ও সানডে ইনভাইটেড টক; হযরত গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক.) এঁর মাজার শরীফে গিলাফ চড়ানো।
সুষ্ঠুভাবে ওরশ সমাপ্ত করতে সহযোগিতা করায় ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী (ম.)।