কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরে সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য কক্সবাজারে স্থাপিত হচ্ছে ‘ওশান মডেলিং সিস্টেম’। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া ও মাছের গতিবিধির আগাম তথ্য কূলে বসেই জানতে পারবেন জেলেরা।
গত ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওশান মডেলিং সিস্টেমসহ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ধাপের প্রায় ৪৪৩ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, ওশান মডেলিং সিস্টেমের আওতায় স্যাটেলাইট ও ডাটা বয়ার মাধ্যমে কক্সবাজারে বসেই বঙ্গোপসাগরে মাছের অবস্থান ও গতিবিধি নির্ণয় করা হবে।
এরপর সেই তথ্য প্রচার করা হবে জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে। ট্রলারে একটি মাত্র জিপিএস কিট বসিয়ে জেলেরা জানতে পারবে এই আগাম তথ্য। এরপর সেই তথ্য মতে বঙ্গোপসাগরের সুনির্দিষ্ট স্থানে মাছ ধরতে যাবে জেলেরা। এতে মাছ ধরা সহজতর হবে এবং সাগর থেকে মাছ আহরণের খরচও কমে যাবে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, ওশান অবজারভেশন সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে সমুদ্রের রিয়েলটাইম ডাটা সরাসরি এই ইনস্টিটিউট থেকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এ জন্য ৫টি ওশানোগ্রাফি ডাটা বয়া এবং স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ সিস্টেম স্থাপন
করা হবে। এ সিস্টেমের সাথে ওশান মডেলিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে সামুদ্রিক ডাটা বিশ্লেষণ করা হবে। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট সিস্টেম, জিএসএম/জিপিআরএস, রেডিও টেকনোলজির মাধ্যমে ডাটা বয়া নেটওয়ার্ক হতে সমুদ্রের রিয়ালটাইম ডাটা সংগ্রহ করা যাবে।
এর মাধ্যমে আমাদের বঙ্গোপসাগরকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা যাবে এবং মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের সেবা প্রদান করা যাবে। এতে দেশের সুনীল অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।
বোরি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ানো হলেও দেশে সমুদ্র গবেষণার কোনো জাহাজ নেই। তবে দ্বিতীয় ধাপের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বোরিতে একটি অত্যাধুনিক গবেষণা জাহাজ যুক্ত হচ্ছে বলে জানান বোরি মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
তিনি বলেন, এছাড়াও এই ইনস্টিউটের ৬টি বিভাগীয় গবেষণাগারকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। বিদেশি গবেষকদের জন্যও আন্তর্জাতিক হোস্টেল ও কনফারেন্স রুম স্থাপন করা হবে।
কক্সবাজারের রামুর পেঁচার দ্বীপে কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন প্রায় ৪০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১৩ সালে এবং উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালে। ১৯৯৪ সালে চালানো সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় কক্সবাজারে চার পর্যায়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।
প্রথম ধাপের কাজের সমাপ্তির পর গত ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা।
এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা কাজের কলেবর বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান মূল ভবনের সম্প্রসারণ, ওশান অবজারভেশন সিস্টেম স্থাপন, মেরিন বায়োলজিক্যাল কালচার ইউনিট তৈরি, ওশান ইকুইপমেন্ট ওয়ার্কশপ স্থাপন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা হবে বলে জানায় বোরি।