অনলাইন ডেস্কঃ
স্কটল্যান্ড থেকে যে অন্তিম যাত্রার শুরু হয়েছিল, মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে তা শেষ হলো উইন্ডসর প্রাসাদে ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে।
স্বামী প্রিন্স ফিলিপের পাশে চিরশয়ানে গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এর মধ্য দিয়ে ৭০ বছরের এক অধ্যায়ের বর্ণাঢ্য যবনিকাপাত হলো।
গত ৭০ বছরে বিশ্ব অনেক পাল্টেছে, ক্ষমতার পালাবদলও হয়েছে অনেক, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। রাজপরিবারের অন্দরমহলের সঙ্কটও আঘাত হেনেছে বারবার। তবে সব ঝড়ঝাপটা এক হাতে সামলে বিশ্বজুড়ে সসম্মানে নিজেকে এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তখন তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে।
নানা আনুষ্ঠানিকতার পর কয়েকদিন আগে রানির মরদেহ আনা হয় লন্ডনে, রাখা হয় ওয়েস্টমিনস্টার হলে। সেখানে চার দিন ধরে চলে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব।
সোমবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় চিরবিদায়ের ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী সারাবিশ্ব থেকে রাষ্ট্রনেতারা এতে যোগ দিয়েছিলেন রাজকীয় সেই শোকের অনুষ্ঠানে। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দিয়েছে এই অনুষ্ঠানের বিশদ বর্ণনা।
নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস, যুবরাজ উইলিয়ামসহ রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই শেষকৃত্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠানে আলোচিত হয়ে উঠেছিল ব্যাগপাইপার।
রানির বিভিন্ন অভ্যাসের কথা ব্রিটিশদের আগে থেকেই জানা, তবে তার মৃত্যুর পর তারা জানতে পারল সুরের প্রতি রানির অনুরাগের কথা।
রানির শাসনামলের বেশিরভাগ সময়ে, তার জানালার নিচ থেকে ব্যাগপাইপার বাজাতে হত সকালে, আর ওই পাইপারের সুরে ঘুম ভাঙত রানির। ব্রিটেনজুড়ে রানির সব প্রাসাদেই এই পাইপার বাদনের ব্যবস্থা ছিল। আর এই ব্যাগপাইপার বাদকদের পদবি হচ্ছে ‘পাইপার টু দ্য সভরেইন’।
সিএনএন জানায়, এই পাইপার অনেকটা রানির ব্যক্তিগত ‘অ্যালার্ম ক্লক’র মতো ছিলেন। প্রতি ভোরে পাইপার ১৫ মিনিট করে বাজাতেন। তবে সোমবার পাইপারকে একটি ভিন্ন ভূমিকায় বাজাতে হলো। যে সুর এতদিন রানীর ঘুম ভাঙাত, এদিন সেই সুরেই রানিকে চিরঘুমে পাঠানো হল।
সোমবার স্থানীয় সময় ১০টা ৪৪ মিনিটে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নেওয়ার মধ্য দিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
যুক্তরাজ্যের রাজকীয় নৌবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কামানবাহী একটি শকটে করে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের পথে রওনা হয়।
রানির শবমিছিলে সামিল হন বড় ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস, তার বোন প্রিন্সেস অ্যান, দুই ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও প্রিন্স এডওয়ার্ড, যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম, প্রিন্স হ্যারিসহ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা।
শবমিছিল যে পথ ধরে গেছে সে পথের দুইপাশে জড়ো হয়েছিলেন লাখো মানুষ। তারা ফুল ছিটিয়ে, তালি দিয়ে রানিকে সম্মান জানান। এ সময় ভিড়ের মধ্যে অনেককে চোখ মুছতেও দেখা গেছে।
রানির কফিন এবং সেটিকে অনুসরণ করা শবমিছিল প্রথমে যায় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের গির্জায়। রানির কফিন গির্জায় প্রবেশের সময় সেখানে উপস্থিত দুই হাজার মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে রানিকে সম্মান জানান। যাদের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজা-রানি, রাজপরিবারের সদস্যসহ প্রায় পাঁচশ জন বিশ্বনেতা এবং কূটনীতিক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
গির্জায় রানির আত্মার শান্তি কামনা করে কমনওয়েলথের মহাপরিচালক ব্যারোনেস স্কটল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বাইবেলের অংশবিশেষ পাঠ করেন।
সেখানে বিশেষভাবে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানের জন্য জুডিথ ওয়্যারের লেখা একটি গান বাজানো হয়।