আন্তর্জাতিক অনলাইন ডেস্কঃ
বিজেপি’র ‘নবান্ন’ ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘিরে চললো জলকামান-কাঁদানে গ্যাস আর পুলিশের লাঠিচার্জ।
অপরদিকে, পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট-পাথর ছুড়তে থাকে বিজেপি কর্মীরা। এরই মাঝে অজ্ঞাতরা বিজেপি সমর্থকদের দিকে ফেলতে থাকে বোমা। পাল্টা ঘাত-প্রতিঘাতে গোটা কলকাতা রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর)।
বিজেপি’র এক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন দিদির পুলিশ কি শুধু বিজেপিকে আটকানোর জন্য?
এদিন ছিল বিজেপির নবান্ন ঘেরাও কর্মসূচি। রাজ্যের শাসকদলের একের পর দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতেই তা হাতিয়ার করাই ছিল কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
কর্মসূচির আরেক কারণ আগামী বছরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। দল কতটা শক্তিশালী এবং তাদের সমর্থকরা গ্রামস্তরের বুথগুলোয় শাসকদলের সঙ্গে কতটা লড়াই করতে পারবে—সেটাই যেন পরখ করে নিতে চাইছিল বিজেপি।
বেলা ১২টার পর মিছিল নবান্নমুখী হতেই ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ বাহিনী। কর্মী-সমর্থকরা সেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। পুলিশের জলকামান আর লাঠিচার্জে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায় বিজেপি’র বহু কর্মী-সমর্থককে। টিয়ার গ্যাসে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিজেপি কর্মীদের থেকে রাশি রাশি উড়ে আসা ইট, পাথর ও কাঁচের বোতলে রক্তাক্ত ও আহত হয় পুলিশের সদস্যরাও।
একদিকে যখন এরকম রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তখনই বিজেপি সমর্থকদের দিকে উড়ে আসতে থাকে বোমা। অতর্কিতে বোমা আসতেই কিছুটা হকচকিয়ে যায় কর্মীরা। পর মুহূর্তে পুলিশকে সামনে পেয়ে আবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার এভাবেই নবান্ন ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে দফায় দফায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কলকাতা ও হাওড়ায়।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি’র দিকে বোমা ফেলেছে।
তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলাম কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেস আর পুলিশ উত্তেজনা তৈরি করেছে।”
এ দিন তিন স্তরের নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হয়েছিল মমতার দুর্গ ‘নবান্ন’ ভবন। একেবারে সড়ক কেটে লোহা ঝালাই করে বানানো হয়েছিল প্রথম ধাপের ৮ ফুটের ব্যারিকেড। মাঝে ছিল বাঁশকাঠ দিয়ে তৈরি ব্যারিকেড এবং সবশেষে ছিল ৮ ফুট মজবুত অ্যালুমিনিয়ামের শিট দিয়ে তৈরি ব্যারিকেড। তারই মাঝে মাঝে মোতায়েন ছিল রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ, জলকামান, বজ্রকামান, দমকল, অ্যাম্বুলেন্স।
পশ্চিমবঙ্গে এই আদলে ব্যারিকেড এবারই প্রথম। সম্ভবত ভারতেও প্রথম। ব্যারিকেড নিয়ে এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে বিজেপি’র নেতাকর্মীরা।
বিজেপি’র নবান্ন অভিযানে পুলিশের প্রস্তুতি দেখে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে এত পুলিশ এলো কোথা থেকে! কয়লা, গরু, বালি, পাথর অবৈধ পারাপার হচ্ছে। তখন পুলিশ দেখা যায় না। পাড়ায় অশান্তি, বোমা পড়লে এমনকি পুড়িয়ে গণহত্যায় থানায় ফোন করলেও পুলিশ আসে না।
পুলিশ জানতেই পারে না এত কোটি কোটি কালো টাকা কলকাতায় ছড়িয়ে আছে। অথচ কেন্দ্র তদন্তকারী সংস্থা সব জানে। নিষ্ক্রিয় পুলিশ আজ এত সক্রিয়! পুলিশ সক্রিয় তবুও বাংলায় এত অপরাধ হচ্ছে। গুজরাটের পুলিশ এখান থেকে মাদক পাচারকারীদের ধরে নিয়ে যায়।
মিজোরাম পুলিশ এসে জঙ্গি ধরে নিয়ে যায়। দিদির পুলিশ কী করে তখন? কেবল বিজেপিকে আটকানোর জন্য আছে? রাস্তা খুঁড়ে ব্যারিকেড লাগিয়েছে। বিজেপি নেতাকর্মীরা উগ্রপন্থি নাকি সন্ত্রাসবাদী? শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। পুলিশ আর তৃণমূল উত্তেজনা ছড়িয়ে আমাদের সমর্থকদের আহত করেছে।”
বিজেপি’র এই কর্মসূচির অনুমোদন ছিল না পুলিশের। ত্রিমুখী এই কর্মসূচিতে হাওড়া ময়দান থেকে নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের।
ওই জেলার সাঁতরাগাছিতে নেতৃত্বে ছিলেন বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতার কলেজ স্কয়ারে নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
ফলে গোটা কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় কর্মসূচি ঘিরে এদিন এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এর জেরে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় শহরজুড়ে। এদিন অধিকাংশ যাত্রী পায়ে হেঁটে অফিস গেছেন।
অপরদিকে, স্কুলগুলোয় চলছে পরীক্ষা। কর্মসূচি আছে জেনে অবিভাবকরা স্কুল খোলার ঘণ্টাখানেক আগে শিক্ষার্থীদের আনতে বাধ্য হন।
শহরবাসীর মত, সব রাজনৈতিক দল সমান। সাধারণের কথা কেউ ভাবে না। বাড়ি ফিরব কী করে? কে সহযোগিতা করবে দল নাকি নেতারা?