চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
গতকাল শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রওশন এরশাদ বলেন, “আল্লাহর রহমতে আমি পুরোপুরি সুস্থ; আমার ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। যারা আমাকে বারবার অসুস্থ বলে প্রচার করছেন, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”
‘কারও কথায় বা চাপে’ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলের কাউন্সিল ডাকতে ‘বাধ্য হয়েছেন’ বলে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের যে দাবি করেছিলেন, তা উড়িয়ে দিয়ে রওশনের নামে এ বিবৃতিটি এসেছে।
জাতীয় পার্টির প্যাডে বিবৃতিটি পাঠান দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন রাজু।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গেল কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অসত্য তথ্য নির্ভর সংবাদের প্রতিবাদে এক বিবৃতিতে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন।”
চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ কাউন্সিল ডাকার পর তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে রওশনের সঙ্গে দেবর কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় দুজনের।
তারপর কাদের দলের চেয়ারম্যান হন, আর রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তিন বছর পর গত ৩০ অগাস্ট আকস্মিকভাবে রওশনের নামে দলে কাউন্সিলর ডাকা হয়। এর পাল্টায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন।
এর মধ্যে গত বুধবার সাংবাদিকদের সামনে এসে কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মনে হয়েছে, তিনি কারও কথায় বা চাপে কাউন্সিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।”
কারা চাপ দিচ্ছে- তাদের পরিচয় স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, “অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়ত বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।”
বিবৃতিতে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলেন, “তৃতীয় পক্ষের ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও বানোয়াট। এর কোনো ভিত্তি নেই। যে মুহূর্তে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি এবং সংসদ কার্যক্রমে অংশ নিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত, সে মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এতে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।”
কাউন্সিল ডাকা রওশনের ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ বলে দলের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিপরীতে রওশন বলেন, “গঠনতন্ত্র ২০ এর উপধারা ১ এ উল্লেখিত বিধিতে দেওয়া প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতা বলে আমি বিশেষ প্রয়োজন উল্লেখ করেই দশম জাতীয় সম্মেলন ডেকেছি।
বিগত তিন বছর সারাদেশে জাতীয় পার্টির যে বেহাল দশা এবং অসংখ্য দক্ষ যোগ্য নেতাকর্মীর আর্তনাদ, আমাকে ব্যথিত করেছে। পল্লীবন্ধু খেতাব ও তার আদর্শকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আল্লাহর অশেষ রহমত এবং লাখো লাখো নেতাকর্মীর দোয়ায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে পার্টিকে রক্ষা করতেই দশম জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সবাই আমার সন্তান, আত্মার পরম আত্মীয়। স্নেহের ছোট ভাই-বোন ও বন্ধুজন। তাই সব বিভেদ ও মতপার্থক্য এবং বিভ্রান্তি ভুলে গিয়ে পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন সফল করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আবারো উদাত্ত আহ্বান জানাই।”
অচিরেই দেশে ফিরছেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আল্লাহর রহমতে শিগগিরই দেশে এসে, সময়ের সাথী হব, বিপদে-আপদে থাকব তোমাদেরই পাশে, ইনশাল্লাহ।”