চট্টগ্রামঃ
একনেকে অনুমোদনের পর প্রায় তিন বছর পার হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রায় ২৬১ কোটি টাকার একটি এলইডি বাতি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। অথচ নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করলে এতদিনে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যেত। দীর্ঘ দিনেও প্রকল্পটির অগ্রগতি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চসিক মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর।
গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ১৬তম সাধারণ সভায় এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। প্রকল্পের ধীরগতির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর ‘অদক্ষতা’ ও ‘অদূরদর্শিতা’ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। প্রয়োজনে প্রকল্প পরিচালককে বাদ দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়। সাধারণ সভায় উপস্থিত একাধিক কাউন্সিলর বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, চসিকের পানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোরশেদ আলম সভায় এলইডি বাতি প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে ১০ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি লাগানোর কথা। আমরাও নগরবাসীকে সেভাবে আশ্বস্ত করেছি।
কিন্তু এখনো প্রকল্পটির টেন্ডারই শেষ হয়নি। অথচ এ সময়ে দেশের অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ বহুদূর এগিয়েছে। অনেকগুলো শেষ হয়েছে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্পে এত বিলম্ব কেন? তবে কি ডিপিপি প্রণয়ন ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয়ে অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা আছে? বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এলইডি বাতি প্রকল্পের বিলম্বের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান। কোনো কারণ প্রকল্পটি বাদ গেলে তার দায়ভার প্রকল্প পরিচালকের ওপর বর্তাবে বলেও সতর্ক করেন। তিনি প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে টেন্ডারসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশনা দেন। মেয়র এলইডি প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সভাকে অবহিত করেন।
জানা গেছে, এলইডি প্রকল্প ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পের দরপত্রে কাউন্সিলরদের প্রস্তাব আমলে না নেয়া, সিডিএর মেগা প্রকল্পের আওতায় খালে দেয়া বাঁধ অপসারণ না করা এবং পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিয়েও উত্তপ্ত ছিল সাধারণ সভা। বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন একাধিক কাউন্সিলর।
বর্জ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলীও চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ওয়ার্ডের সমস্যার আলোকে যে উন্নয়ন কাজ আগে করতে হবে তার প্রস্তাবনা দেয়ার পরও প্রকৌশল বিভাগ দরপত্র আহ্বান করার সময় তা বাদ দেয়। তারা তাদের মতো করে বাছাই করে।
জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালে দেয়া বাঁধ দ্রুত অপসারণেরও দাবি করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে হাটহাজারী রোডের বেহাল দশা তুলে ধরে চসিকের প্ল্যান্ট থেকে মালামাল সরবরাহের প্রস্তাব করেন। শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদও খালের বাঁধ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, খালে পানি যাওয়ার জায়গা না থাকলে স্বাভাবিকভাবে রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হবে।
এ সময় মেয়র সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকল্পটি অগ্রাধিকার দেয়া হবে তাতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতামত নিতে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দেন। তিনি হাটহাজারী রোডের কাজ চসিকের নিজস্ব অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক ব্যাটারিচালিত রিকশার বদলে সৌরবিদ্যুৎচালিত রিকশার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সিটি মেয়র বলেন, নগরে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশার কারণে যানজট ও নানা ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রিকশা তৈরি করে তা চলাচলের বৈধতা দেয়ার বিষয়ে বিআরটিএ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করা হবে।