চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামে যুবলীগের তিনটি ইউনিটের আলোচিত সম্মেলনকে ঘিরে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার করা হয়েছে।
অলিগলিও ছেয়ে গেছে ব্যানারে-পোস্টারে। বড় আকারের একেকটি ডিজিটাল ব্যানার চারপাশ ঢেকে ফেলেছে। ঢাকা পড়েছে নগরীর সব চত্বর। নগরীতে এর আগে কখনো কোনো ইস্যুকে ঘিরে এমন ব্যানার, পোস্টারের আধিক্য দেখা যায়নি বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন ঝোলানো হলেও, গেট তৈরি করা হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কোনো রাজস্ব পায়নি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগ দক্ষিণ জেলার সম্মেলন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। আজ হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত হবে উত্তর জেলার সম্মেলন। আগামীকাল মহানগরের সম্মেলনের মাধ্যমে দুই সপ্তাহ ধরে নগরীতে চলা উত্তেজনাকর এক উৎসবের পর্দা নামবে। যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে শীর্ষ নেতাদের অনেকে গত এক সপ্তাহ ধরে হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে অবস্থান করছেন। রেডিসনকেন্দ্রিক নানা আলোচনা চলছে ক’দিন ধরে। সম্মেলনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা ও বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে।
তবে আলোচিত ও চোখে পড়ার মতো ঘটনা হচ্ছে হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। নেতাদের পাশাপাশি নিজেদের ছবি দিয়ে ছাপানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার। শহরের বড় বড় ভবন, ফ্লাইওভার, চত্বর থেকে বৃক্ষ-সর্বত্র ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার। পাঁচলাইশ চত্বর পুরোটাই ঢেকে গেছে।
প্রবর্তক মোড়ের রূপালি গিটার, চট্টেশ্বরী মোড়ের জহুর মান্নান চত্বর, কাজির দেউড়ি মোড়ের ডা. জাকেরিয়া চৌধুরী চত্বর, সার্কিট হাউজের গেট, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সাইনবোর্ড পুরোটা ঢেকে গেছে, বিজয় শিখাসহ পুরো চত্বর, আসকারদীঘি এলাকার মৈত্রী, সিআরবিসহ সর্বত্র ব্যানার, পোস্টারের ছড়াছড়ি।
সড়কের উপর বাঁশ পুঁতে টাঙানো হয়েছে বড় সাইজের ব্যানার। কোনো কোনো পয়েন্টে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ভবন। ডিজিটাল ফর্মেও চলছে যুব নেতাদের ব্যানার। চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী ও পটিয়ার চিত্রও একই। পথে পথে গেট। ব্যানার, ফেস্টুন তো আছেই।
চট্টগ্রাম শহর ও মফস্বলে মোট কত ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার লাগানো হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর সংখ্যা কয়েক লাখ হবে। এর পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুবলীগের তিন ইউনিটের সম্মেলনকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ছাপানো এবং গেট স্থাপন করা হয়েছে।
ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করতে প্রতি বর্গফুটে গড়ে ২০ টাকা খরচ হয়। ২০ ফুট বা ১০ ফুট আকৃতির ২শ বর্গফুটের একটি ব্যানারে খরচ পড়ে কমপক্ষে ৪ হাজার টাকা। এটি শুধু ছাপানোর খরচ। এর সাথে আনুষাঙ্গিক খরচ আছে। তোরণ তৈরিতেও অনেক খরচ।
আন্দরকিল্লার একাধিক ছাপাখানায় কথা বলে জানা গেছে, একেকটি ব্যানার, পোস্টারে গড়ে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। পোস্টার ও ফেস্টুনে ৬ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে।
এদিকে হাজার হাজার ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও তোরণ করা হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে কোনো রাজস্ব দেয়া হয়নি। চসিকের কর আইন অনুযায়ী কর্পোরেশনের অনুমতি ব্যতীত কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও তোরণ করার সুযোগ নেই।
কর বিধিমালা ১৯৮৬ অনুযায়ী অবাণিজ্যিক একটি তোরণের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা, প্রতিটি ব্যানার, ফেস্টুনে ১৫ দিনের জন্য ৫শ টাকা, প্রতিটি বড় পোস্টারের জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা, ছোট পোস্টারের জন্য ৭ টাকা করে কর প্রদান করতে হয়।
চসিকের এক কর্মকর্তা জানান, যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে চট্টগ্রাম শহর ব্যানারে, ফেস্টুনে ছেয়ে গেলেও সিটি কর্পোরেশন কোনো রাজস্ব পায়নি।