অনলাইন ডেস্কঃ
পাবজি গেম, পর্নোগ্রাফি ও বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে আসক্তির জেরে বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মগোপনে ছিল ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। দীর্ঘ পাঁচ মাসের চেষ্টায় রহস্যময়ভাবে হারিয়ে যাওয়া ওই কিশোরকে উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
গতকাল শনিবার (৭ মে) বিকেলে চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর চকবাজারের বাসা থেকে বের হয়ে যায় ওই কিশোর। ছেলেকে না পেয়ে ভিকটিমের বাবা-মা চট্টগ্রামে চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরে জিডির কপিসহ র্যাবের কাছে একটি আবেদন করা হয়।
কিশোরের আত্মগোপনে যাওয়ার কারণ বর্ণনা দিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, ওই কিশোর দশম শ্রেণির ছাত্র। ১২ বয়স বয়সেই তাকে স্মার্ট ফোন দেওয়া হয়। গত দুই বছর ধরে সে পাবজি গেমে আসক্ত। পাবজি গেম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও সে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে সারাক্ষণ পাবজি ও অন্যান্য এডাল্ট ওয়েবসাইটে বিচরণ করত। যার কারণে পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রায় সময় বকাঝকা করতেন।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মোবাইলে গেম খেলছিল কিশোর। পড়া বাদ দিয়ে গেম খেলার কারণে বাবা-মা তাকে শাসন করেন। এক পর্যায়ে তার বাবা বলেন, ‘তোমার রোজগার তুমি করে খাও’। এই কথা শোনার পর ভিকটিম রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
ঘর থেকে বের হয়ে ওই কিশোর চট্টগ্রাম শহরের অলংকার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। এক মাস ২২ দিন চাকরি করে সেখান থেকে চলে যায় চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় এলাকার আরেকটি রেস্টুরেন্টে। সেখানে কিছুদিন চাকরি করে সে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিউ চান্দগাঁও রেস্ট হাউজে চাকরি নেয়। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিল।
রেস্টহাউজে চাকরি করার সময় সেখানে একটি মোবাইল পায় কিশোর। তা দিয়ে সে আবার পাবজি গেম ও বিভিন্ন এডাল্ট ওয়েবসাইটে বিচরণ শুরু করে। মোবাইলে নতুন সিম ও নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, হারানোর পর ভিকটিমকে খুঁজে পেতে তার পরিবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। এছাড়া ফেসবুকে একটি পেজ খুলে তাকে উদ্ধার চেষ্টা চালায়।
তিনি আরও জানান, নিখোঁজ হওয়া ওই কিশোর তার নতুন ফেসবুক একাউন্ট থেকে বিভিন্ন কমেন্ট করত। সেই কমেন্টগুলো পড়ে ও বিভিন্ন আলামত পেয়ে ওই কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ মে রাতে তাকে চান্দগাঁও থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর বাবা-মা এসে তাকে শনাক্ত করে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, উদ্ধার হওয়া কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, প্রাপ্ত বয়স্কদের একটি গ্রুপের সঙ্গে ভিকটিমের চলাফেরা ছিল। ওই গ্রুপের সদস্য হান্নান পোল্যান্ড থাকে এবং জয় থাকে কাতারে। এরা যখন ছুটি পেয়ে দেশে থাকে তখন এই উশৃঙ্খল ও বিকৃত রুচির কার্যক্রম বেড়ে যায়।
ওই গ্রুপের সদস্যরা পরস্পর এডাল্ট ভিডিও শেয়ার করতেন ও ইন্টারনেট পর্নোগ্রফিতে আসক্ত ছিলেন।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভিকটিমকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।