চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের কাজের জন্য বিদেশি অর্থের সংগ্রহ হয়নি এখনো। দ্রুতগতির এ রেলওয়ে সেবা বাস্তবায়নে সম্ভাব্য মোট ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
২০১৭ সালের মার্চে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন নানা কথাবার্তা হলেও এখনো বিদেশি অর্থের কারণে আটকে আছে। এটি বাস্তবায়ন রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে উত্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এর আগের বৈঠকে সংসদীয় কমিটি ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন উত্থাপনের সুপারিশ করে। এর প্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রামের এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী প্রতিবেদন উত্থাপনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কমিটি এই রেলপথের কাজ দ্রুত শুরু করার সুপারিশ করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ও নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ও বিশদ ডিজাইন করার জন্য ২০১৮ সালে মে মাসে আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ও বিশদ ডিজাইন প্রণয়নের কাজ ২০২১ সালের জুনে সম্পন্ন করে। এসময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। এজন্য ব্যয় হয় ১১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এখনো পাওয়া যায়নি। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহের নিমিত্তে বর্ণিত প্রকল্পের পিডিপিপি ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত তথ্য
> ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলের এলাইনমেন্টের দৈর্ঘ্য ২২৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে হাইস্পিড রেলপথের প্রস্তাব।
> প্রস্তাবিত হাইস্পিড রেলস্টেশন- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রাম।
> প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ ৬২৫ হেক্টর।
> ভ্রমণের সময়- বিরতিহীনভাবে চলাচলের ক্ষেত্রে ৫৫ মিনিট এবং বিরতিসহ চলাচলের ক্ষেত্রে ৭৩ মিনিট, অর্থাৎ এক ঘণ্টা ১৩ মিনিট।
> হাইস্পিড রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।
> ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলওয়ের (প্যাসেঞ্জার ডেডিকেটেড ট্রেন) মূল টেকনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড হলো- ডিজাইন স্পিড ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার।
> ট্র্যাকের সংখ্যা: ডাবল ট্রাক, স্টান্ডার্ড গেজ (১৪৩৫ মি.মি) এক্সেল লোড: ১৭ টন।
> ট্র্যাকশন টাইপ: ইলেকট্রিক, ট্র্যাক টাইপ- ব্যালাস্টলেস, কনটিনিউয়াস ওয়েলডেড রেল (সিডব্লিউআর)।
> অবকাঠামোর ধরণ: অধিকাংশই এলিভেটেড ব্রিজ/ভায়াডাক্ট।
> সিগনালিং ব্যবস্থা: অটোমেটিক ব্লক সিস্টেম।
এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে জানালীহাট-চুয়েট-কাপ্তাই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ধীরাশ্রম কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থা, ঢাকা সার্কুলার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের অগ্রগতিসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
কমিটি ঢাকা সার্কুলার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ও নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সুপারিশ করে।
কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, মো. শফিকুল আজম খাঁন এমপি ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।