ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
সভ্যসমাজের যেকোন জাতিরাষ্ট্রে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুশাসনের সমকালীন প্রপঞ্চ সততা-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার গুরুত্ব অপরিসীম। অতিসম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০২১ সালের কান্ট্রি প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সুশাসনে জোর এবং দুর্নীতির লাগাম টানতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
সংস্থাটির মতে, শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করে দুর্নীতি কমিয়ে কাঠামোগত উন্নয়ন করলে তা বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়তা করবে। সরকারি খাত ডিজিটালাইজেশন হলে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং দুর্নীতি কমবে। মন্ত্রী ও এমপিসহ বড় পদে থাকা সকল সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের ঘোষণা জনসমক্ষে প্রকাশ করে তা হালনাগাদ করার মানসম্পন্ন পদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে।
কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা না মানলে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য আরও কার্যকরভাবে যাচাই করার ব্যবস্থা করাসহ দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, আভিযোগ অনুসন্ধান পদ্ধতির উন্নতি ঘটানোর বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে; বাংলাদেশ সরকার একমত যে, সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চলমান এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতিবিরোধী সেল গঠন ও একটি ‘হুইসেল ব্লোয়ার (তথ্য ফাঁসকারীর সুরক্ষা)’ আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশবাসীসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশ-সংস্থাসমূহ সম্যক অবগত আছেন, মিথ্যা-কল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক আভিযোগের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রচণ্ড বাধাবিপত্তির চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বিনাদোষে সামাজিক-ব্যক্তিক-পারিবারিক-রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অসহনীয় হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সার্বিক উন্নয়নের পথে ধাবিত হবে- এটি বিশেষ কুচক্রিমহল কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না। তারা শুরু থেকে বৈরী আচরণ ও চক্রান্তমূলক কর্মকাণ্ডে নগ্ন-নির্লজ্জ মুখোশ উন্মুক্ত করে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। সরকারের অবিচল বক্তব্য ছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
তবুও বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। জনশ্রুতি মতে, বিশ্বব্যাংকের এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয় দেশীয় একটি চক্র। জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থেকে দেশীয় অর্থায়নে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে দেশী-বিদেশী তদন্ত সংস্থা এবং কানাডার আদালত সুস্পষ্টভাবে রায় দেয় যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং আনীত অভিযোগ ছিল ভুয়া-মিথ্যা ও কাল্পনিক। পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। এত বাধাবিপত্তি আর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েও বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে কীভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণে অটল থেকে প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হলো তারও একটি বস্তনিষ্ঠ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ দিলাম, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে। আপনারা শুনলে একটু অবাক হবেন, সাদা কাগজে একটা চিরকুট। এখান থেকে অমুক পাবে এত পারসেন্ট, অমুক এত পারসেন্ট। এভাবে নানা অপপ্রচার শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকের কাছে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ নেই।
বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনল, তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, আমরা দুর্নীতি করিনি, পারলে প্রমাণ করো। আল্লাহর রহমতে প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট যেখানে মামলা করেছিল, তারা বলে দিয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমি কথা দিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানানো। আপনাদের দোয়ায় সেই পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করে যাচ্ছি।’
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের চাপেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করতে হয়েছে। একটি অহেতুক অভিযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। আমরা যখনই মামলা করেছিলাম, তখনই বুঝা গিয়েছিল এটা একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা এই মামলার তদন্ত পর্যায়ে যতই গভীরে গিয়েছি ততই এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে মনে হয়েছে।
এই মামলা করলে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে এবং দেশের উপকারে আসবে- এই ভেবে মামলাটি করা হয়েছিল। এই মামলায় দেশের ভাবমূর্তি যেন ক্ষুন্ন না হয়, তাই একজন দক্ষ কর্মকর্তা দ্বারা মামলাটির তদন্ত করা হয়েছিল। তদন্তে অভিযোগটি ভিত্তিহীন মনে হওয়ায় এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দেওয়া হয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমানভিত্তিক’ ও ‘গুজব’ বলে উল্লেখ করেছেন কানাডার আদালত। আদালত যে রায় দিয়েছে সেখানে কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেছে। জল্পনা, গুজব রটনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। যুক্তিগুলো আদালতের কাছে আমলযোগ্য হয়নি। সে কারণে মামলা খারিজ করা হয়েছে।
এতে প্রমাণিত হলো; বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছিল সেগুলো যুক্তিহীন ছিল। এই অভিযোগের মাধ্যমে সরকার ও দেশের জনগণের ওপর একটা কলঙ্কের কালিমা লেপন হয়েছিল। এই রায়ের ফলে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। আমি মনে করি, এর জন্য সরকার সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে জবাব চাইতে পারে।” দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’কে ‘শো-পিস’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শূন্য সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তারা শোপিস হিসেবেই এটা দেখাতে চেষ্টা করেছে। এর একটি ভিত্তি থাকতে হবে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ওই অভিযোগ করা হয়েছিল। এর পেছনে অন্য কিছু কাজ করেছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর চীন সফরকালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ হলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, পদ্মা সেতু ও আপনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও বিশিষ্ট কতিপয় লোকের কথায় প্রভাবিত হয়েছেন। এ জন্য আমি অনুতপ্ত।’ ১১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, “বিশ্বব্যাংক ‘দুর্নীতির উদ্দেশ্য’ ছিল বলে যেই অভিযোগে অর্থায়ন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তা পরবর্তীতে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়।” কানাডা আদালতের সম্মানিত বিচারপতি নর্ডহেইমারের বক্তব্য ছিল, ‘দুর্নীতির অভিযোগটি অনুমান-ভিত্তিক বা গুজব।
আইটিওতে যেসব তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, তা অনুমান-গুজব ও শোনা কথার বেশি কিছু ছিল না। আর এই গুজব ও শোনা কথাকে সমর্থন দিতে সক্ষম এমন কোনো সরাসরি তথ্য ভিত্তিক প্রমাণ দেওয়া হয়নি বা তদন্ত করা হয়নি।’ পদ্মা সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর দুদক আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণের নিমিত্ত প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগটি অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্রের আলোকে প্রমাণিত হয়নি বিধায় তা দুদক কর্তৃক অনুসন্ধান পরিসমাপ্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে দুদকের সাবেক কমিশনার জনাব সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা এবং আইন ও বিধিকে সমুন্নত রেখে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা গ্রহণে আমরা রাজি হয়েছিলাম শুধু দেশ ও জনগণের স্বার্থে। আমরা এটাও ভেবেছি যে, বিশ্বব্যাংকের Expert team অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলে তারা তদন্ত কার্যক্রমে দুদকের স্বচ্ছতা সম্পর্কে অবহিত হবে এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মতামত প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী Luis Moreno Ocampo এর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশ্বব্যাংকের External Panel of Experts অপর দুই সদস্য ছিলেন হংকংয়ের দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার Timothy Tom এবং U.K. Serious Fraud office এর পরিচালক Richard Alderman. কোনো কোনো মহল থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিশেষ Panel-কে মোকাবিলা করা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয় এমন সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
তাদের এই সন্দেহ যে অমূলক ছিল তা পরবর্তীতে আমরা আমাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা দিয়ে প্রমাণ করেছি। এটি স্বীকৃত যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো ঘুষ লেনদেন হয়নি বা কোনো দুর্নীতি হয়নি। কেননা অর্থ বরাদ্দ হলেও কোনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। External Panel এর সঙ্গে আলোচনাকালে দুর্নীতি না হলেও দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল মর্মে Panel এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
আমরা এ ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্র’ সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য-উপাত্ত, দালিলিক, মৌখিক এবং ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা সমর্থনের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য চেয়েছিলাম। বিশ্বব্যাংকের Referral Report অভিযোগের ভিত্তি হলেও ওই Report-এ বর্ণিত বক্তব্যসমূহের সমর্থনে প্রণিধানযোগ্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্যের অভাব ছিল।’
২০১২ সালের পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের মামলায় প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান মাননীয় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক রচিত ‘পদ্মা সেতু : ষড়যন্ত্রের অন্তরালে’ নিবন্ধে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে মামলা শুরুর ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘পত্রিকায় একটা খবর আসল বিশ্বব্যাংকে এমন কথা উঠেছে যে পদ্মা সেতু সুপারভিশন কন্ট্রাক্টের ব্যাপারে একটা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং দুর্নীতি হচ্ছে।
তখন দুদক তার নিয়ম অনুসারে এই খবরের ওপর একটা অনুসন্ধান করতে শুরু করল। দুদকের অনুসন্ধানের সময় বিশ্বব্যাংক বলল, তাদের কাছেও তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। আমরা সেই তথ্য দেব। এই নিয়ে দুদককে একটি মামলা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, ‘একটা পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক থেকে বলা হলো, দুদক একা নয়। এখানে বিশ্বব্যাংক তাদের লোক দিয়ে দুদকের মাধ্যমে অনুসন্ধান করবে।
আমরা তখন দুদকের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে পরিষ্কারভাবে বলে দিলাম, আমাদের দেশের আইনে এমন কোনো শর্ত বা নিয়ম নেই যেটা দুদকের করার কথা সেটা অন্য কোনো বিদেশি সংস্থা অনুসন্ধান করবে। এরকম যদি হয় তবে মামলাই করা যাবে না। কারণ মামলা টিকবে না। তখন তারা বলল, এটা যদি না হয় তবে আমরা (বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) ঋণ দেব না।’
মিথ্যা ও কাল্পনিক প্রতিহিংসা-প্রতিশোধপরায়ণতা-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তিগত বা কথিত মিডিয়ায় কদর্য প্রভাব বা অনৈতিক পন্থায় প্ররোচিত অনুসন্ধানের নামে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি-মিডিয়া ট্রায়ালসহ নানামুখী পন্থায় ব্যক্তির চরিত্র হরণ-সম্মানহানির দায় কে নেবে? এসব অনর্থক কদাচার-মিথ্যাচার-অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে সৎ-সত্যবাদীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান-তদন্ত উঁচুমার্গের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিমানসের মনস্তত্ত্বকে গভীর কুঠারাঘাত করে।
দীর্ঘ দিনের নীতিনৈতিকতা-সততা-ন্যায়নিষ্ঠতা-ত্যাগ-দেশপ্রেমের অমর সঞ্চয়কে বিতর্কিত করার অপকৌশল বহন করতে না পেরে উল্লেখ্য ব্যক্তিবর্গ আত্মহননের পথ বেচে নিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। বিষয়টি অবশ্যই দুদকের ধারণায় প্রোথিত করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্ব স্ব আইনের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠান বা দেশের স্বার্থে কোনো কর্মযজ্ঞ সম্পন্নকালে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে ব্যর্থ কথিত সংক্ষুব্ধদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মোড়কে দুদকে অভিযোগ এবং কল্পিত অভিযোগের অনুসন্ধান-তদন্তের আগেই অভিযোগকারীর পরিচয়-উদ্দেশ্য এবং অভিযোগের রহস্য উদ্ঘাটিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এই ক্ষেত্রে অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের অবৈধ উপার্জন-অর্থলিপ্সুতা কতটুকু কার্যকর; উচ্চ আদালতের একজন সম্মানিত বিচারপতির নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থা থেকে সৎ-যোগ্য-চৌকস ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নৈর্ব্যক্তিক-বস্তুনিষ্ঠ-সত্যনিষ্ঠ তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে প্রকৃত সত্য উম্মোচিত হবে। ফলশ্রুতিতে আদালতে চলমান মামলাগুলো সুচারুরূপে পরিচালনায় আইনের যথার্থ প্রয়োগ সম্ভব।
প্রাসঙ্গিকতায় দেশ-আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মিথ্যা-অসত্য অভিযোগে ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি সাধনের পূর্বেই সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক বিষয়সমূহের নিবিড় পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ বিবেচ্য। সত্যের কাঠিন্যে দুদকের সকল কর্মপদ্ধতি সত্যনিষ্ঠতায় অপরাজিত থাকুক এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে নানা কুযুক্তিতে ফাঁসানোর অপচেষ্টা সংহার করে যথার্থ দুর্নীতি নিমূর্লে দুদক সর্বাত্মক সফল ও সার্থক হোক- সবিনয়ে এই প্রত্যাশ্যাটুকু নিবেদন করছি।