অনলাইন ডেস্কঃ
ভোজ্যতেল কারখানাগুলোর প্রবেশমুখে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়া ও সেখানে চাঁদাবাজি এবং সরবরাহ আদেশ (এসও) কয়েকবার হাতবদলই খুচরা বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণ বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে উঠে এসেছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যালয়ে ভোজ্যতেল মিল মালিক এবং সরবরাহ পর্যায়ের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দাম বাড়ার এসব তথ্য উঠে আসে। এমন প্রেক্ষাপটে কারখানা পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আগামী কয়েক দিনে ‘কারখানায় অধিকতর তদন্ত’ চালানো হবে বলে বৈঠক শেষে জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান।
বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, ভোজ্যতেলের মিলগুলোতে সরবরাহ আদেশ (এসও) দেওয়ার পর মিল গেইটে ট্রাক নিয়ে সাত থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হয় ডিলার বা তাদের প্রতিনিধিদের। ফলে ট্রাক ভাড়া বাবদ প্রতিদিন গুণতে হয় কয়েক হাজার টাকার বিলম্ব ফি। আবার মিলগুলোতে এসও বুকিং দেওয়ার পর নিজেরা পণ্য বুঝে না নিয়ে তা অন্যের কাছে লিটারে অন্তত ১১ টাকা লাভে ‘বেআইনিভাবে’ বিক্রি করে দেন ডিলাররা।
এ প্রক্রিয়ায় একাধিকবার এসও হাতবদল করেন ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যায়ে অর্থলগ্নিকারী অনেকে। বৈঠকে জানানো হয়, ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারি ক্রেতারা অস্বাভাবিক দামে তেল কিনলেও এ লেনদেনে থাকে না কোনো প্রমাণ বা পাকা রশিদ। আর মিলগুলোতে পণ্য বুকিং দিয়ে তা ১৫ দিনের মধ্যে বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক অর্থলগ্নিকারী ব্যবসায়ী ভালো দামের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।
এ জন্য তারা পণ্য বুঝে নেন না। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদা না দিলে তেল বুঝে নেওয়ার জন্য কারখানার অভ্যন্তরে ঢুকতে পারে না ট্রাকগুলো। অনিয়মের কিছু বিষয় ব্যবসায়ীরা স্বীকার করলেও মিল মালিকরা তা স্বীকার করেননি। বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি ‘সরবরাহ সঙ্কটের মিথ্যা খবর ছড়িয়ে’ ব্যবসায়ীরা সয়াবিন ও পামতেলের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভোজ্যতেল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তর।
এরপর ‘কারখানায় অধিকতর তদন্ত চালানো হবে’ বলে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান বলেন, মিল থেকে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার- এখন সরবরাহ অর্ডার-এসও বলা হচ্ছে) লেটারের মাধ্যমে পণ্য কিনে। এরপর সেই পণ্য বুঝে না নিয়েই আরেকজন ক্রেতার কাছে লিটারে ১১ টাকা বেশি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন একজন ডিলার। এতে করে আমার যা বোঝার সেটা বোঝা হয়ে গেছে।
মিল পর্যায়ে যাবে প্রতিনিধিদল : বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আজ থেকে যতগুলো এসও (ডিও) যাবে সেগুলোতে প্রাইস লেখা থাকতে হবে। গতকালকেও (মঙ্গলবার) যদি কোনো এসও বুকিং দেওয়া হয় সেটা ২৪ মার্চের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হবে। তেল দেশের বাইরে যায় কিনা এ বিষয়েও তদন্ত শুরু করা হবে। ট্রাক প্রতি যে চাঁদাবাজির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা নিয়েও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো। আমাদের একটি দল মিলগুলোতে গিয়ে বসবে। ডিও লেটার বুকিং দেওয়ার পরও দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়, সেই বিয়ষটা যাচাই করে দেখব।
দাম কমাতে তোলা হচ্ছে ভ্যাট : ভোজ্য তেলের বাজার সামলাতে ভ্যাট তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছিল এনবিআরকে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই নিত্যপণ্যটির উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার নিয়ে ‘কাজ চলছে’ বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছেন এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে ভোজ্য তেলের চলমান পরিস্থিতিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়ে ঘোষণা ‘শিগগিরই আসতে পারে’ বলে জানান এই এনবিআর সদস্য।
এদিকে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তারা (এনবিআর) এ বিষয়ে ইতিবাচক। আশা করি, অচিরেই একটা সুখবর পাওয়া যাবে।