ন্যাটোয় আর যেতে চায় না ইউক্রেন।। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বোমা হামলা।।
চেরনোবিল প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
তেলসহ রাশিয়ার জ্বালানি ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে বর্ণনা করে ওয়াশিংটনকে এর সমুচিৎ জবাবের অপেক্ষা করতে বলেছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে যুক্তরাষ্ট্র গত মঙ্গলবার রাশিয়া থেকে সব ধরনের তেল, গ্যাস এবং কয়লা আমদানি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
তাদের পশ্চিমা মিত্ররাও কম-বেশি একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় রাশিয়ার অর্থনীতি ১৯৯১ সালের পর সব থেকে বড় সংকটে পড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিডিনিউজ জানায়, রাশিয়ার আর্থিক এবং কর্পোরেট খাতের পুরোটাই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে।
ওই নিষেধাজ্ঞাকে আক্রমণাত্মক আচরণ বলে বর্ণনা করে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার জের পুরো বিশ্ববাজারের উপর পড়বে। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এই বিশৃঙ্খলা কতদিন থাকবে সেটাও পরিষ্কার না।
আপনারা পাগলা নৃত্য দেখছেন, আক্রমণাত্মক পাগলা নৃত্য, যেটা পশ্চিমারা দেখেছে এবং অবশ্যই সেটা পরিস্থিতিকে অধিকতর জটিল করে তুলছে এবং আমাদেরকে বিষয়টি আরো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বাধ্য করছে। ‘(নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে) আমরা বরং জ্বালানি বাজারের পরিস্থিতি দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে যেতে দেখছি এবং আমরা জানি না এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি কত দিন চলবে।’
জ্বালানি ক্ষেত্রে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাব রাশিয়া কীভাবে দিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কিছু বলেনি। তবে ক্রেমলিন জানায়, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কীভাবে সব থেকে কম করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মারিউপোলে হাসপাতালে বোমা হামলা : ইউক্রেনে অবরুদ্ধ মারিউপোল শহরে একটি শিশু হাসপাতাল রুশ বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলে শহরটির পৌর কর্তৃপক্ষ এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে দেয়া ওই বিবৃতিতে কাউন্সিলের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, রুশ দখলদার বাহিনী শিশু হাসপাতালের ওপর কয়েকটি বোমা ফেলেছে।
তিনি বলেন, এতে শিশু ও প্রসূতি বিভাগসহ হাসপাতালটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, হতাহতের সঠিক সংখ্যা তারা এখনো জানেন না। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক ভিডিও ফুটেজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘নৃশংসতা, ধ্বংসাবশেষের নিচে মানুষ, শিশুরা চাপা পড়ছে।’ তিনি অবিলম্বে ইউক্রেনের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন’ কার্যকরের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের ক্ষমতা আছে কিন্তু আপনারা মানবতা হারিয়ে ফেলছেন।
ন্যাটোয় যেতে আর জোর দিতে চায় না ইউক্রেন : ‘ইউক্রেন বুঝে গিয়েছেন, ন্যাটো রাশিয়াকে চটাবে না। তাই ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনিও কোনো জোরাজুরি করবেন না। তিনি এমন দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান না, যারা হাঁটু গেড়ে ভিক্ষে চায়। টিভি সাক্ষাৎকারে এই কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কি। শুধু তাই নয়, রাশিয়াপন্থী দুটি এলাকার (ডনেৎস্ক ও লুহানস্ক) বর্তমান অবস্থা নিয়েও তিনি খোলা মনে সমঝোতা করতে প্রস্তুত বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদানের সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন ভ্লাদিমির পুতিন সে দেশ আক্রমণের আগে ডনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জেলেনেস্কির এ দিনের মন্তব্য যদি রাশিয়াকে প্রচ্ছন্ন বার্তা হয়, সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে তা সহায়ক হলেও হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
যুদ্ধের সময়ে অন্তত ২০টি দেশ নেপথ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর।
কিন্তু ন্যাটো এখনও প্রকাশ্যে ময়দানে না নামায় অথবা ইউক্রেনের আকাশসীমায় উড়ান নিষিদ্ধ না করায় জেলেনেস্কি তা নিয়ে বারবারই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ দিনও ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ১৩ দিন ধরে শুধু প্রতিশ্রুতির কথা শুনেই আসছি। আকাশপথে নাকি আমাদের সাহায্য করা হবে।
আমাদের জন্য বিমান পাঠানো হবে। এ বিষয়ে এখনও যারা সিদ্ধান্ত নিতে পারল না, রাশিয়ার আক্রমণ থেকে ইউক্রেনের আকাশকে সুরক্ষিত রাখতে পারল না, দায়িত্ব কিন্তু তাদের উপরেই বর্তাবে। পরে এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা বুঝে গিয়েছি, ন্যাটো ইউক্রেনকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।
বিতর্কের ভয় পায় এই জোট। রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যেতেও তারা চায় না। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও তিনি যে দেশ ছাড়েননি, তা বোঝাতে নয়া ভিডিও বার্তায় নিজের বর্তমান ঠিকানাও জানিয়ে দিয়েছেন জেলেনেস্কি। বলেছেন, আমি কিয়েভের বাঙ্কোভা স্ট্রিটে আছি। আমি লুকিয়ে নেই। কাউকে ভয় পাচ্ছি না। দেশপ্রেমের এই যুদ্ধ জিততে যা যা করার, আমি করব।
চেরনোবিল প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ : জাতিসংঘের যে সংস্থাটি পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারি করে সেই আইএইএ বলছে, ইউক্রেনে চেরনোবিলের সাবেক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে তারা আর তথ্য পাচ্ছে না। সংস্থাটি বলছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রুশ সৈন্যরা ওই কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার পর থেকে সেখানে দুশো জনেরও বেশি লোক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে এবং এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
আইএইএ বলছে, ইউক্রেনের এই পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কোম্পানি বলছে, চেরনোবিলের প্ল্যান্টটির বিদ্যুৎ সরবরাহ কেটে দেয়া হয়েছে।
দুসপ্তাহ আগে রাশিয়া কেন্দ্রটি দখল করে নেবার সময় এই বিদ্যুতের লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে দিয়েছে যে কেন্দ্রটি থেকে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে। কারণ ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানিকে ঠাণ্ডা করা যায় না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ওই কেন্দ্রটিতে জরুরি মেরামতের কাজ করার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান পাঠাবে না জার্মানি : জার্মানি বলছে, তারা ইউক্রেনে কোনো যুদ্ধবিমান পাঠাবে না। এর আগে পোল্যান্ড প্রস্তাব দিয়েছিল যে তারা জার্মানির একটি মার্কিন ঘাঁটির মাধ্যমে তাদের হাতে থাকা রুশ-নির্মিত মিগ-২৯ জেটগুলোকে ইউক্রেনে পাঠাতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ বলছেন, তার দেশ ইউক্রেনকে বিভিন্ন রকম প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে তবে যুদ্ধবিমান তার অংশ নয়। যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন মুখপাত্রও বলেছেন যে ন্যাটোর জেটবিমান বা পাইলটরা রাশিয়ার বিমান গুলি করে নামাবে- এটা সম্ভব নয়।