চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে রেশন কার্ড দেবে সরকার। এই কার্ড দেখিয়ে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন জনগণ। সিটি করপোরেশন ও জেলায় এ সুবিধার আওতায় আনা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে রমজানের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অবাধ সরবরাহ ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডিসি বললেন, টিসিবির পণ্য এখন রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। সরকারের ১২৩ ধরনের ভাতা সুবিধাভোগী কোনো মানুষ এ কার্ডের আওতায় আসবে না। আসন্ন রমজান মাসের শুরু ও শেষের দিকে দুই ধাপে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে।
আসন্ন রমজানে পণ্যমূল্য ছাড়াও ভেজাল ও ওজনে কারচুপির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এজন্য মার্কেট-বাজার কমিটিকে দায়িত্ব নিতে হবে। অভিযান পরিচালনা ও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য প্রতিটি মার্কেটে ব্যবসায়ী-বণিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল নম্বর টাঙাতে হবে। বললেন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রমজানে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। ভেজাল ঘি ও সেমাই তৈরি করা হয়। ভোক্তাদের না ঠকানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা অনেক টাকা যাকাত দেন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখা বা সীমিত লাভ করে বিক্রির অনুরোধ করেছেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে ভোগ্যপণ্যে কেনাবেচায় রশিদ প্রদর্শনের অনুরোধ করেছেন তিনি।
ভোক্তা সংগঠন ক্যাব, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী, নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও কাঁচা বাজার-আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
সভায় কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারি মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআইয়ের কাছে অবৈধ পানি বোতলজাত, ঘি ও সেমাই কারখানার তালিকা নেই।
রমজান মাসে ভোগ্যপণ্য ও পোশাকের দাম সহনশীল রাখার অনুরোধ করে তিনি বলেন, রমজানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছাড় দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশে পণ্যের দাম ৩-৪ গুণ বেড়ে যায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড এন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেলের কারণে ভোগ্যপণ্যে দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। দেশের ৩৪টি সড়ক-মহাসড়কের কোথাও ওজন স্কেল নেই।
শুধু একটি সড়কে রয়েছে। এ ওজন স্কেলের জন্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। তিনি বলেন, চিনি ও তেলের মিল হচ্ছে ঢাকায়। সেখান থেকে এনে বিক্রি হয় চট্টগ্রামে। আর দাম বাড়লে দায় চাপানো হয় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ওপর।
আমদানিকারক আবুল বশর বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর গমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২০-৩০ ডলার বেড়ে গেছে। এছাড়াও ডলারের দামবৃদ্ধি ও ব্যাংক ঋণের প্রভাবও রয়েছে আমদানিতে। সরকার ডলারের দাম ও ব্যাংক ঋণ স্থিতিশীল বা নিয়ন্ত্রণে রাখলে পণ্যের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কামাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির খালিদ চৌধুরী বলেন, ‘টিসিবি’র তেল খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যের পণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে টিসিবির কোনো মনিটরিং নেই।’ সভায় ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার, সরকারি সংস্থা টিবিসি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আমদানিকারক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।