চট্টগ্রামঃ
ধীরে ধীর জমে উঠেছে বইমেলা। ভিড় বাড়ছে পাঠকের। বাড়ছে বিক্রিও। এতে খুশি লেখক এবং প্রকাশকগণ। বইমেলার দ্বিতীয় দিন গত সোমবার ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ছুটির দিন হওয়ায় এদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীর। অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার আগের দিনের তুলনায় লোকসমাগম ছিল কম। কমেছে বিক্রিও।
গত দুই দিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেলাকে ঘিরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। প্রবেশপথে বসানো হয়েছে সিএমপির নিরাপত্তা চৌকি। করোনার ঝুঁিক এড়াতে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা দিচ্ছিলেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যা প্রথমদিন ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত মেলা জমে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল কথা হয় মনন প্রকাশনার বিক্রয় প্রতিনিধি আবদুর মুবিনের সাথে। তিনি বলেন, চারটি নতুন বই এসেছে। আজ বেচাবিক্রি একটু কম। আশা করছি সামনে বাড়বে। শিশু প্রকাশের আরিফ রায়হান বলেন, আজ বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। গতকাল (সোমবার) অনেক ভাল ছিল।
প্রথম দুইবার (২০১৯ ও ২০২০) এ বইমেলা অনেক জমেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আরো বেশি জমার কথা। কিন্তু এবার এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। এর কারণ হতে পারে বিগত দুই বছর সিটি কর্পোরেশন যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছিল এবার তেমনটি করেনি।
তবে শেষ পর্যন্ত মেলা জমে ওঠবে বলেই আমরা আশাবাদী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকাশক বলেন, মেলা শুরুর তারিখ বার বার পেছানোর একটা প্রভাব থাকতে পারে মেলা না জমার জন্য। আবার প্রচারণার ঘাটতিও লক্ষ্যণীয়। গত দুইবার যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছিল এবার তেমনটি করেনি।
দাড়িকমা প্রকাশনার বিক্রয়কর্মী সাকিব বলেন, মোটামুটি বিকিকিনি হচ্ছে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি বেশি হয়েছিল। কালধারা প্রকাশনার বিক্রয়কর্মী ইমরান বলেন, আজ বিক্রি একটু কম হচ্ছে। লোকজনের উপস্থিতিও কম। গতকাল (সেমাবার) বেশি ছিল।
প্রসঙ্গত, নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে তৃতীয়বারের মত চলছে অমর একুশে বইমেলা। মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা ও ছুটির দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদন করা হয়েছে এবারের মেলা। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল আছে। এদিকে গতকাল মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় লোক উৎসব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির লোক সংস্কৃতির গবেষক ড. আমিনুর রহমান সুলতান।
তিনি বলেন, লোক সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের লোকজ সংস্কৃতিকে অন্তরে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। প্রধান বক্তা চবি বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লোকজসংস্কৃতির গবেষক ড. শেখ সাদী বলেছেন, লোক সংস্কৃতির মূল উৎপত্তি গ্রামের কৃষক শ্রমিকের চিন্তা চেতনা থেকে।
বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। আমরা চাকচিক্যময় নগরজীবনের পিছনে ছুটতে গিয়ে লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে হারাতে বসেছি। প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, ছৈয়দ ইরফানুল হক আল মাইজভান্ডারি।