চট্টগ্রামঃ
অবশেষে স্বতন্ত্র ইউনিটে ২০ শয্যার প্রিজন সেল চালু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। হাসপাতালের দুতলায় পুরনো প্রশাসনিক ব্লকের পাশে মডেল পরিবার-পরিকল্পনা ক্লিনিকের জায়গায় প্রিজন সেলটি স্থাপন করা হয়েছে। সেলটি গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান সেলটি উদ্বোধন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলামসহ কারাগার ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তারা সাথে ছিলেন।
প্রিজন সেলটি চালুর মাধ্যমে কারাবন্দি রোগীদের আলাদাভাবে এক জায়গায় রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদানের দ্বার উন্মোচিত হল বলে মনে করছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। চালুর পর বর্তমানে ৬ জন কারাবন্দি রোগী এই প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই প্রিজন সেলে ২০টি শয্যা রয়েছে। এর মাঝে ১৬ শয্যায় পুরুষ এবং বাকি চারটি শয্যা নারী কারাবন্দিদের জন্য সংরক্ষিত। এখন থেকে অসুস্থ বা গুরুতর অসুস্থ কারগারের কোন বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাদের এই প্রিজন সেলে ভর্তি রেখেই আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এতদিন সাধারণ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীদের সাথেই কারাবন্দি রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হত।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন কয়েদি রোগীর সাথে এক শিফটে অন্তত তিনজন কারারক্ষী ওয়ার্ডে অবস্থান করেন। তিন শিফটে ৯ জন কারারক্ষী ছাড়াও একজন পুলিশ সদস্যকে থাকতে হয় পাহারায়। বিভিন্ন ওয়ার্ডে এভাবে কয়েদি রোগীর সাথে কারারক্ষী ও পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা অস্বস্তিতে ভুগেন। যা হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশের সাথে মানানসই নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েদি রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা প্রিজন সেল চালু করায় কোন পক্ষকেই এখন আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এর আগে ২০১৮ সালে কয়েদি রোগীদের জন্য হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৬ শয্যার আলাদা এ প্রিজন সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের তিন তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডের ৫টি কক্ষ সংস্কার করে এ প্রিজন সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা হাসপাতাল প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। একই সাথে নির্দিষ্ট কোন ওয়ার্ডের অধীনে না করে স্বতন্ত্র একটি ইউনিটে আলাদা প্রিজন সেল স্থাপনের দাবি জানান চিকিৎসকরা।
এর প্রেক্ষিতে মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রিজন সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে হাসপাতাল প্রশাসন। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রিজন সেল হচ্ছে না/স্বতন্ত্র ইউনিটে করার দাবি চিকিৎসকদের’ শিরোনামে দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন তৈরি করাকালীন চিকিৎসকরা দাবি করেছিলেন, কয়েদি রোগীদের চিকিৎসায় একটি স্বতন্ত্র ইউনিট করেই প্রিজন সেল স্থাপন অপরিহার্য। ঢাকার পিজি হাসপাতালেও প্রিজন সেলের ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, প্রিজন সেলে সবকয়টি বিভাগের সম্পৃক্ততা থাকতে হয়। এখানে (প্রিজন সেলে) মেডিসিনের চিকিৎসক যেমন দরকার, তেমনি সার্জারী, হৃদরোগ বা গাইনীসহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকও দরকার।
এমন না যে, শুধু মেডিসিন বা সার্জারী বিভাগের সম্পৃত্ততা থাকলেই হলো। তাই নির্দিষ্ট একটি বিভাগ বা ওয়ার্ডের অধীনে প্রিজন সেল স্থাপন করা যথাযথ সিদ্ধান্ত না। প্রিজন সেল করলে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র একটি ইউনিটে স্থাপন করাটাই যুক্তিযুক্ত বলে দাবি করেছিলেন চিকিৎসকরা।
পরবর্তীতে হাসপাতালের দুতলায় পুরণো প্রশাসনিক ব্লকের পাশে মডেল পরিবার-পরিকল্পনা ক্লিনিকের জায়গায় স্বতন্ত্রভাবে প্রিজন সেলটি স্থাপনের প্রস্তাব দেয় চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। এমন প্রস্তাবনা সংক্রান্ত একটি চিঠি ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর কারা মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়। হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদের স্বাক্ষরে এ চিঠি পাঠানো হয়।
এ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ‘অবশেষে প্রিজন সেল স্বতন্ত্র ইউনিটেই/প্রশাসনিক ব্লকের পাশে স্থাপনের প্রস্তাব। অবশেষে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে স্বতন্ত্র এই প্রিজন সেল চালু হল চমেক হাসপাতালে।
যেখানে কয়েদি রোগীরা আলাদাভাবে চিকিৎসা পাবেন। আর কয়েদি রোগীদের পাহারায় সেখানে নিয়োজিত থাকবেন কারারক্ষীরা।