চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
আমদানি করা পিগ আয়রন বা স্ক্র্যাপ লোহা সীতাকুণ্ডের কারখানায় নেওয়ার পথে চুরি হয়ে যাচ্ছে ট্রাক থেকে, বাধা দিতে গেলে খুনোখুনিও হচ্ছে। পুলিশ বলছে, মূলত চট্টগ্রামের সাতটি পয়েন্টে এসব চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে কয়েকটি চক্র, যারা ভাসমান ও মাদকাসক্ত কিশোর তরুণদের ব্যবহার করছে এ কাজে।
সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় চলন্ত ট্রাকে চুরিতে বাধা দিতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হন মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই প্রহরী। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক প্রহরীকে খুন করা হয় চুরির সময়।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন কোম্পানি ইস্পাত তৈরির জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল হিসেবে পিগ আয়রন আমদানি করে। ট্রাকে করে সীতাকুণ্ড এলাকায় এসব কোম্পানির কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) নোবেল চাকমা বলেন, কারখানায় নেওয়ার পথে চোর চক্রের সদস্যরা ট্রাকে উঠে পড়ে। সেখান থেকে রাস্তায় রাস্তায় তারা লোহা ফেলে দেয়। অন্যরা সেসব সরিয়ে ফেলে।
মাঝিরঘাট, একে খান, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিঙ্ক রোডসহ বিভিন্ন স্থানে এসব চক্র গড়ে উঠেছে। এসব চক্রে সাথে সরাসরি যুক্ত আছে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন। ভাসমান ও মাদকাসক্ত কিশোর তরুণদের তারা ব্যবহার করে এসব চুরির কাজে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা নোবেল বলেন, চুরি করতে গিয়ে যারা বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়ছে, তাদের অনেকেই অল্পবয়সী। বয়সের কারণে তারা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়, পরে আবার এই চুরিতে জড়ায়। গত সোমবার দুপুরে সদরঘাট থেকে তিনটি ট্রাকে করে সীতাকুণ্ড উপজেলায় একটি কারখানায় স্ক্র্যাপ লোহা নেওয়ার পথে মাঝিরঘাট নারিকেল তলা এলাকায় জনা ট্রাকে উঠে পড়ে দশেক কিশোর। ট্রাক থেকে লোহা ফেলার সময় তাদের বাধা দেওয়ায় মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মী আবু সুফিয়ান ও মোহিনী কুমার চাকমাকে তারা ছুরিকাঘাত করে।
নগরীর সদরঘাট থানায় এ ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে, দুটি ছুরি ও চুরি করা স্ক্র্যাপ লোহা উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- তোরাব ফকির (২৮), নুর নবী সাকিব (২২), মো. রাতুল (১৯), মো. পারভেজ (২২), মো. ইমন (১৯), ও মো. শাকিল (১৯)। তাদের মধ্যে তোরাব ফকির এ চক্রটির নেতৃত্বে ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য। এর আগে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে একটি স্টিল মিলে ট্রাক থেকে মালামাল নামানোর সময় আবুল হাসেম নিরব (১৯) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়, যিনি ওই ট্রাকের মালামালের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
পুলিশ সে সময় জানিয়েছিল, মাঝপথে কিছু লোক লোহার পাত ছুড়ে মেরে গাড়ি থামায়। পরে ১০/১৫ জন মিলে ট্রাকে উঠে মালামাল নামিয়ে ফেলে। তাদের বাধা দেওয়ায় নিরবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করে। মালামাল নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা একটি গাড়িও জব্দ করা হয়।
সাত স্পটে চোরের হানা: নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পশ্চিম) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, বেশিরভাগ সময় রাতের বেলায় কারখানায় মালামাল নেওয়ার পথে চোরের দল ট্রাকে হানা দেয়। তদন্তে আমরা নগরী এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের মোট সাতটি স্পট চিহ্নিত করেছি। যেসব স্থানে মূলত ট্রাক থেকে মালামাল চুরি হচ্ছে।
এই সাত স্পট হল: নগরীর মাঝিরঘাট, বারিক বিল্ডিং, বারো কোয়ার্টার, ঈদগাঁ, অলঙ্কার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের টোল রোড সংলগ্ন সেবা ফিলিং স্টেশন, পাক্কা রাস্তার মাথা ও কালু শাহ ব্রিজ।
মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, স্ক্র্যাপ লোহা বহনকারী ট্রাকগুলো চলাচলের সময় গতি কম থাকা অবস্থায় ১০/১৫ জন উঠে যায়। এ সময় তারা গাড়ি থেকে রাস্তায় লোহা ফেলে দেয়।
সহকারী কমিশনার মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, মাঝিরঘাট, বন্দর, টোলরোড, কাট্টলী, এসহাক ডিপো, হালিশহর ও সীতাকুণ্ডের কয়েকটি চক্র এসব চুরির সাথে জড়িত বলে তথ্য আছে পুলিশের কাছে।