অনুমোদন পেলে সাত মাসে রিপোর্ট দেবে চীনা কোম্পানি সংযুক্ত হবে মীরসরাই-আনোয়ারা…….
চট্টগ্রাম শহরে ‘মাস র্যাপিড ট্রানজিট’ (এমআরটি) সার্ভিস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে (ফিজিবিলিটি স্টাডি) নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে এমআরটি’র দুটো অংশ অর্থাৎ মেট্রোরেল এবং মনোরেল এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এ স্টাডিতে শহরের এমআরটি রুটের সঙ্গে মীরসরাই ইকোনোমিক জোন এবং আনোয়ারা ইকোনোমিক জোনকে সম্পৃক্ত করা যায় কীনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে এমআরটি চালুর বিষয়ে গতকাল বিকেলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামে এমআরটি’র সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের কথা জানান।
সভায় চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) এবং উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড এমআরটি নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রতিষ্ঠান দুটো এমআরটি নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার নির্দেশনা দেন। এরপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে দাপ্তরিক অনুমোদন পাওয়া মাত্র কাজ শুরু করে দিবে রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) এবং উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড। কাজ শুরুর ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট উপস্থাপন করবে তারা। এজন্য চীন থেকে ৫০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম চট্টগ্রাম আসবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি বিষয়ে ২০১৯ সালে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ দিয়ে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল চসিক। একই বছরের জুলাই মাসে চসিকের কাছে হস্তান্তরকৃত প্রতিবেদনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নগরে ৫৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রুটে পৃথক তিনটি এমআরটি সার্ভিস চালু করা সম্ভব।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) এবং উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড তাদের সমীক্ষায় ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ এর প্রস্তাবিত তিনটি রুটের উপর জোর দিবে। একইসঙ্গে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টকে সম্পৃক্ত করা হবে। পাশাপাশি মীরসরাই ও আনোয়ারাসহ নিকটতম উপজেলাগুলোকে সম্পৃক্ত করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) এবং উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেডের কান্ট্রি প্রতিনিধি আবিদ রহমান তানভীর দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চাচ্ছি। এটার জন্য প্রথমবার গত মে মাসে সিটি কর্পোরেশনকে প্রস্তাব করেছিলাম। তখন মেয়র মহোদয় ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন।
এরপ্রেক্ষিতে তখন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটা সমন্বয় সভাও হয়েছিল। ওই সভা থেকে আমাদের প্রস্তাবে সায় দেয়া হয়েছিল।
গতকালকের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয় আমাদের প্রস্তাবনা পজেটিভভাবে নিয়েছেন।
আরো স্টাডি করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। আজকের মিটিংয়ের আলোকে এবং সরকারি কাজের নিয়ম-নীতির প্রেক্ষিতে আরেকটি চিঠি দিব আমরা। সেটা অ্যাপ্রুভ হলে কাজ শুরু করব।
তিনি বলেন, যখন কাজ শুরু করব তখন চীন থেকে ৫০ জনের একটা এঙপার্ট টিম দেশে আনব। আরো ১০০ জনের মত অভিজ্ঞ প্রকৌশলী চায়না হেড অফিসে থাকবেন। যারা এখানকার রিপোর্টগুলো ওখানে একজায়গায় সমন্বয় করবেন।
তিনি বলেন, এমআরটি’র দুটো অংশ মেট্রোরেল এবং মনোরেল নিয়ে সমীক্ষা হবে এবং এরপর সিদ্ধান্ত পৌঁছা যাবে, বাস্তবে মেট্রোরেল বা মনোরেল চালু করা যাবে কীনা।
এমআরটি’র সম্ভাব্য রুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের করা প্রাক সম্ভাব্যতার আলোকে আমাদের কাজ এগিয়ে নিব। আমাদের পরিকল্পনা আছে, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টকে যুক্ত করার। প্রতি দেড় কিলোমিটার পর পর স্টেশন করা হবে।
তিনি বলেন, প্রধান পরিকল্পনা হবে দূরের মানুষকে কানেক্ট করা। এক্ষেত্রে ইকনমিক জোনগুলোকে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছে আছে। আনোয়ারা এবং মীরসরাই ইকোনোমিক জোনে কিন্তু শহর থেকে দৈনিক প্রচুর লোক আসা-যাওয়া করবে। তখন কিন্তু যানবাহনের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি হবে। শহরে মানুষের সংখ্যাও বাড়বে। তাই ইকোনোমিক জোনগুলোকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
চসিকের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে লালখান বাজার-বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক রয়েছে। সেখানে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। এ অবস্থায় সেখানে এমআরটি চালুর সম্ভাবনা কতটুক জানতে চাইলে বলেন, ফ্লাইওভারের কারণে মনোরেলের প্রস্তাব করেছিলাম।
এখন ফ্লাইওভারের যে কলামগুলো হচ্ছে তার একেকটার লেংথ আড়াই মিটার-তিন মিটার। মনোরেলে লাগবে শূন্য দশমিক আট থেকে এক দশমিক দুই মিটার। তার মানে অনেক ছোট। তাছাড়া এটা অনেক উঁচুতে নেয়া যাবে। এ রুটে অনেক ভবন আছে, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকবে। তবে মনোরেলের সবচেয় বড় সুবিধা হচ্ছে বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়েও ট্র্যাকটা যেতে পারবে।
তিনি বলেন, মনোরেলে একটা ট্র্যাকে প্রতি ঘণ্টায় ত্রিশ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যার আলোকে সেটা সম্ভব। তবে সম্পূর্ণ স্টাডি না হওয়া পর্যন্ত ফাইনাল কিছু বলা যাবে না।
গতকালকের বৈঠকের বিষয়ে চসিকের নগরপরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর দৈনিক আজাদীকে বলেন, চীনের প্রতিষ্ঠান মনোরেল এবং মেট্রোরেল দুটো নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। এখন দুটো নিয়েই ফিজিবিলিটি স্টাডি হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনের চারটি প্রতিষ্ঠান নগরে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে মনোরেল ও মেট্রোরেল চালুর প্রস্তাব করে। তবে এমআরটি চালু বা এ সংক্রান্ত আরো অধিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল চালুর নির্দেশ’ দেয়ার পর তৎপরতা শুরু করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে গতকালকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।