দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা চট্টগ্রামের প্রায় এক লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশেষে বিতরণ শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে ছাপা হয়ে ক্রমান্বয়ে আসতে শুরু করেছে বহুল প্রত্যাশার ড্রাইভিং লাইসেন্স।
প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজারের মতো লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে। তবে বর্তমানে নতুন আবেদনের পাশাপাশি আটকে পড়া ৮৫ হাজার লাইসেন্সের মহাজট সামাল দিতে আরো এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে মারাত্মক এক সংকট তৈরি হয়েছিল দেশে। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত করা, নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগে নানা ধরনের জটিলতা এবং করোনাকালের ভয়াল সময়ে সংকট তৈরি হওয়ায় চট্টগ্রামের ৮৫ হাজারসহ দেশে ১২ লাখ ৪৫ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর কাজ আটকা পড়ে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর ব্যাপারে আবেদন সংগ্রহ করলেও তা ছাপানো সম্ভব হচ্ছিল না। জমা স্লিপ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন দেশের হাজার হাজার ড্রাইভার। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছিল বিদেশগামী ড্রাইভারেরা।
যারা প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেও লাইসেন্স পাচ্ছিল না। যেই জমা স্লিপ দিয়ে দেশে গাড়ি চালানো যাচ্ছিল তার কোন বৈধতা ছিল না বিদেশে। এতে করে ড্রাইভিং ভিসায় বিদেশ যাওয়ার সংখ্যা একেবারে তলানীতে এসে ঠেকেছিল।
অবশেষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সাথে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্যাপারে চুক্তি করে। গত অক্টোবরে সম্পাদিত এই চুক্তির আওতায় বিএমটিএফ স্মার্ট কার্ড ছাপানো শুরু করে। যা ক্রমান্বয়ে দেশের বিআরটিএর ৫৪টি অফিসে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের আটকে পড়া ৮৫ হাজার লাইসেন্সের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সর্বমোট ৬ হাজার ৪শ’ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ঢাকায় ছাপানো এসব লাইসেন্স কুরিয়ারের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এসব লাইসেন্সের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৩শ’ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ড্রাইভারদের লাইসেন্স আসার ব্যাপারটি জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাদের লাইসেন্স এসেছে তাদেরকে লাইসেন্স সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অনেক বড় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষের লাইসেন্স আটকা পড়েছিল। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেও লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশেষ করে বিদেশগামীদের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছিল।
তবে পরিস্থিতি এখন ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা নিয়মিত লাইসেন্স পাচ্ছি। ছাপাও হচ্ছে। গত দুই মাসে ছয় হাজারেরও বেশি লাইসেন্স এসেছে। ৮৫ হাজার লাইসেন্স ছাপানো এবং চট্টগ্রামে পৌঁছতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজারের মতো লাইসেন্স আসছে।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) যে হারে লাইসেন্স ছাপাচ্ছে সেই গতি আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।