প্রার্থী দুই প্রার্থীর ভোট বর্জন,
তিন কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা
পটিয়া প্রতিনিধিঃ
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টিতে নৌকা এবং চারটিতে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে পটিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরাফাত আল হোসাইনী।
এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল রিটার্নিং এবং নিবার্চন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পটিয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী যারা সরাসরি ভোটে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন— খরনা ইউনিয়নে মাহবুবুর রহমান (নৌকা), জিরি ইউনিয়নে আমিনুল ইসলাম টিপু (নৌকা), আশিয়া ইউনিয়নে এম এ হাসেম (নৌকা), কাশিয়াইশ ইউনিয়নে আবুল কাশেম (নৌকা), কেলিশহর ইউনিয়নে সরোজ কান্তি সেন নান্টু (নৌকা), ছনহরা ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম (নৌকা), কচুয়াই ইউনিয়নে ইনজামুল হক জসিম (নৌকা), হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে ফৌজুল কবির কুমার (নৌকা), ধলঘাট ইউনিয়নে রনবীর ঘোষ টুটুন (নৌকা), ভাটিখাইন ইউনিয়নে মোহাম্মদ বখতিয়ার (নৌকা)।
এছাড়াও ৪টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা নির্বাচিত হলেন তারা হলেন, জঙ্গল খাইন ইউনিয়নে শাহাদাত হোসেন সবুজ (স্বতন্ত্র), কোলাগাঁও ইউনিয়নে মাহবুবুল হক চৌধুরী (স্বতন্ত্র), হাইদগাঁও ইউনিয়নে বি এম জসিম (স্বতন্ত্র) ও কুসুমপুরা ইউনিয়নে জাকারিয়া ডালিম (স্বতন্ত্র)।
এর আগে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শোভনদন্ডী ইউনিয়নে এহসানুল হক (নৌকা), বড়লিয়া ইউনিয়নে শাহীনুল ইসলাম সানু (নৌকা) এবং দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নে মোহাম্মদ সেলিম (নৌকা)।
গতকাল রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পটিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল থেকে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মধ্যদিয়ে চলে ভোটগ্রহণ। উপজেলার বড়লিয়া, শোভনদন্ডী ও দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এসব ইউনিয়নগুলোতে শুধুমাত্র সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ভোট গ্রহণ চলে। বাকি ১৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৭ ইউনিয়নে ১৬০টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। শুরুতেই লম্বা লাইনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চললেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমে যায়। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্যে ব্যালট ছিনতাই, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
সকাল ১০টার দিকে ছনহারা ইউনিয়নের ধাউরডেঙ্গা সারদাচরণ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম এবং আনারস প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ দৌলতীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে একই ইউনিয়নের রমেশ পনীন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া বেলা ১১টার দিকে উপজেলার জিরি ইউনিয়নের সাইদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চশমা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম বাবুলের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল ইসলামের সমর্থকদের বাকবিতন্ডা হয়। এরপর কেন্দ্রটি বন্ধ ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং অফিসার মো. রবিউল আউয়াল। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বাবুলকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছনহরা ইউনিয়নের মঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী কোহিনুর আক্তারের সঙ্গে কলম প্রতীকের প্রার্থী বিবি মরিয়মের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। দুপুর ১টার দিকে হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন আমিন শরীফ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি। এ সময় নৌকা প্রতীকের পক্ষে স্থানীয় সাংসদের ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবকে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়।
চওই কেন্দ্রে ইভিএম কক্ষে ভোটারের সাথে একের বেশি ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে এমপির ভাই ও তার সহযোগীরা ভোটকেন্দ্র থেকে সটকে পড়েন। তবে ওই ইউনিয়নের (হাবিলাসদ্বীপ) স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন।
এদিকে দুপুর ২টার দিকে চাটারা নোমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের ব্যালট পেপারে আগে থেকে সিল মেরে রাখতে দেখা যায়। পরে সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দ মো. সরফরাজ খানকে বিষয়টি অবহিত করলে ব্যালট পেপারগুলো তাৎক্ষণিক বাতিল করেন।