রণেশ মৈত্রঃ
সারা জীবনে দেখা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য্য ঘটনা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস ব্যাপী ঐ মুক্তিযুদ্ধের নানা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো গণমাধ্যম যে ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছিল সেইটি।
১৯৭১ এর মার্চের শুরু থেকেই তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে রুখে দাঁড়াতে সুরু করে পাকিস্তানের নিষ্ঠুর সামরিক একনায়ক তন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে একচ্ছত্রভাবে রায় পাওয়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঐ শাসক গোষ্ঠী ৩ মার্চ তারিখে ঢাকায় সংসদ অধিবেশন বসবে বলে ঘোষণা দিয়ে সেইমতে অধিবেশন ডেকেও ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করায় লালিত সন্দেহ গভীরতর হয়।
অত:পর বঙ্গবন্ধু সত্বর সংসদ অধিবেশন ঢাকায় আহ্বানের তাগিদ দিয়ে জানান, গণরায় মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা হোক। কারণ তা করা হবে এমন প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই বাঙালি জাতি ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং আওয়ামী লীগের ৬ দফা ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর অনুকূলে ব্যাপকভাবে ভোট প্রদান করায় এখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেতে আইনত: অধিকারী। কিন্তু কোন হুঁশিয়ারীতেই যখন কাজ হলো না তখন বঙ্গবন্ধুর ডাকে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
যখন প্রতিদিন ব্যাংক, ইন্সিওরেন্স, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আদালত সব কিছুই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ রাখা বা খুলে রেখে পাকিস্তান সরকারকে বাঙালীরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মারলো তখন সামরিক শাসক গোষ্ঠী আলাপ-আলোচনার জন্য তৎকালীন সকল বিরোধী দলীয় নেতাকে ডেকে সংলাপ শুরু করলেন। তখন তাতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে পাক্তিান পিপল্স্ পার্টি, খান আবদুল ওয়ালি খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।
সংলাপকে যেন সময় ক্ষেপনের অজুহাত হিসেবে দেখা না হয় তার জন্য বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ারী জানান কিন্তু বস্তুত: জুলফিকার আলী ভুট্টোর মাধ্যমে সামরিক জান্তা সংলাপকে প্রহসনে পরিণত করে।
অপরদিকে সমগ্র পূর্ব বাংলা জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনকে তীব্রতর করা হয়।
এই আন্দোলনের খবর ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সকল সংবাদপত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছিল এবং তার ফলে প্রদেশব্যাপী শহরে নাগরে, বন্দরে অপ্রতিহত গতিতে আন্দোলনটি ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বেতার থেকেও কিছু কিছু খবর প্রচার করা হচ্ছিল। টেলিভিশন বা মোবাইল ফোনের প্রচলন তখনও হয় নি। রেডিও পাওয়া গেলেও গ্রাম/শহরের বাড়ী বাড়ীতে দূরের কথা, পাড়ায় একটি করেও ছিল না। সংবাদ পত্র ও মফ:স্বলে গিয়ে পৌঁছাত একদিন পরে।
বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং ধানমণ্ডীস্থ বাসভবন ছিল আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের স্থান-অঘোষিত অফিস যেন। প্রতিদিন নেতারা বৈঠক করে পরের দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করতেন। কখনও কখনও তাঁরা দুই তিন দিনের প্যাকেজ কর্মসূচীও দিতেন।
কিন্তু এই কর্মসূচীগুলির প্রচার কিভাবে হবে? টেলিভিশন না থাকায় এবং রেডিওর স্বল্পতা জনিত কারণে ব্যাপক প্রচার প্রায় দু:সাধ্য ব্যাপারে পরিণত হয়। ফলে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও ছাত্রসংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দের কাছে কর্মসূচীগুলি পৌঁছানো দুরুহ হয়ে পড়ে। এই অভাবটা মিটিয়ে ছিলেন বিদেশী সাংবাদিকেরা। ঝাঁকে ঝাঁকে বিপুল সংখ্যক বিদেশী সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের সাংবাদিক তখন ঢাকায়।
সেই ঝোড়ো দিনগুলিতে ৭ মার্চ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সরকারকে চরমপত্র দিয়ে বাঙালী জাতিকে “যার হাতে যা আছে” তাই নিয়ে লাড়াই চালিয়ে যাওয়ার এবং দাবী আদায় যতদিন না হয় ততদিন অসহযোগ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাঙালি জাতিকে উদাত্ত আহ্বান জানালে লাখো বাঙালি হাত তুলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ঘোষণা করেন।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা বেতার এই ভাষণ প্রচারে বিরত থাকে। কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত জনগণের চাপে পড়ে রেডিও কর্তৃপক্ষ ভাষণটি পরের দিন প্রচার করলে জাতি তার করণীয় উপলব্ধি করে। তরুণ-তরুণীরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করে। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে।
বিছিন্নভাবে নানাস্থানে পাক-বাহিনী দু একজন করে বাঙালিকে হঠাৎ গুলি করে হত্যা করতে শুরু করে।
এইভাবে গড়াতে গড়াতে আলোচনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় দৃশ্যত: জুলফিকার আলী ভূট্টোর মাধ্যমে। বস্তুত: ভুট্টো পাক বাহিনী ও তাদের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছিল।
২৫ মার্চ রাত্রে আকস্মাৎ পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা গোপনে আলোচনার নেতাদেরকে কোন কিছু না জানিয়ে বা কোন প্রকার ঘোষণা না দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাবার আগে বঙ্গবন্ধুকে গোপানে ন্যাপ সভাপতি ওয়ালি খান খবর পাঠান শীঘ্র বাড়ী ত্যাগ করতে। সেনাবাহিনী অতর্কিতে হামলা চালাবে। হামলাটি বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপরে সহ নানা জায়গায় চালাতে পারে।
দেখা গেল ঠিকই তাই। “অপারেশন সার্চলাইট” নামে ঐ রাতেই ঢাকাতে ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচী নিয়ে যাওয়া হয় তার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি ঘোষণাপত্র রেখে যান যা চট্টগ্রাম বেতার থেকে প্রচার করা হয়। পরে মেজর জিয়াউর রহমানও স্বকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর নামে তা প্রচার করেন।
গভীর রাতে সকলেই যখন নিদ্রিত, তখন ঢাকার রাস্তায় ট্যাংক বের করা হয়। আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং পিলখানা ই.পি.আর ডেহকোয়ার্টার্স। এই অতর্কিত আক্রমণে অসংখ্য পুলিশ ও ই.পি.আর বাহিনীর সদস্য নিহত হন।
একই সাথে ট্যাঙ্ক বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও তার বিভিন্ন ছাত্রাবাসে আক্রমণ করে হাজার হাজার ছাত্রকেও হত্যা করে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও শাসক গোষ্ঠী বাঙালীর প্রতিরোধের শক্তিগুলিকে নিঃশেষ করার লক্ষ্যে এবং সমগ্র বাঙালী জাতিকে নির্মূল করার লক্ষ্যেই এমন আসুরিক নির্মমতার সাথে বাঙালি নিধন যজ্ঞে প্রবৃত্ত হয়।
প্রচার করা হয় পূর্ব-পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে ষড়যন্ত্র শেখ মুজিবর রহমান করেছিলেন সেই বিচ্ছিন্নাদী আন্দোলনকে নশ্যাৎ করতেই সেনাবাহিনী ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত আক্রণ পরিচালিত করেছে। এগুলির সম্পর্কে কোন খবর যাতে কোন পত্রিকা প্রকাশ না করে বা রেডিও না প্রচার করে তেমন নির্দেশ দিয়ে সকল ঘটনা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব যাতে না জানতে পারে তার সকল ব্যবস্থা তারা করেছিল। সেইলক্ষে তার পূর্বেই বিদেশী সাংবাদিকরেকে পূর্ব বাংলা ছেড়ে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়।
অপরপক্ষে আন্দোলন সমর্থক দৈনিক সংবাদের বাংশাল রোডস্থ দোতলা বাড়ীটিও গুঁড়িয়ে দেয়। ইত্তেফাকের প্রকাশনাও নিষিদ্ধ করা হয়।
শুরু হয় বিদেশী সাংবাদিকদের ব্যাপক তৎপরতা। পরদিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ ভোর থেকে কলকাতা কেন্দ্র থেকে আকাশ বানী বারংবার ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি প্রচার করা হয় এবং দফায় দফায় ঢাকার ঘটনাবলী তারা প্রচার করতে থাকে।
বিদেশী সাংবাদিকরা গোপনে ট্যাংক বাহিনী ঢাকা শহরে যে গণহত্যা চালিয়ছে তার ছবি নিজ নিজ ক্যামেরায় ধারণ করে ঘটনার বর্ণনাসহ নানা বিশেষ এয়ারলাইনসের মাধ্যমে গোপনে পাচার করতে থাকে। মুহুর্তে বি.বি.সি. সহ সকল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিশেষ খবর হিসেবে গণহত্যার বিবরণ সমূহ প্রচার করতে থাকে। ঢাকা শহরকে তারা যে মৃতের শহরে পরিণত করেছে তাও গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়। বিদেশী সাংবাদিকেরা ঢাকা ছেড়ে নানা পথে গোপনে চলে যান নিজ নিজ দেশে নিজ নিজ কর্মস্থলে।
কিন্তু ২৬ মার্চ রাতেই যে ঘটনার শেষ নয় প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং শেষে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে দেশে-বিদেশে সাংবাদিকেরা তেমন ধারণা করে ভারতের কলকাতা বা দিল্লীতে হোটেলে বাস করে গোপনে চোরাপথে মারত্মক ঝুঁকি নিয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও গেরিলা কায়দায় প্রবেশ করে খবরের তথ্য ও উপাদান সংগ্রহ করে ফিরে গিয়ে তা নিজ নিজ পত্রিকা বা টেলিভিশন বা বেতারে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করেন।
দেশ-বিদেশের পত্রিকায় গণহত্যার খবরসহ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার, সহস্র বাঙালি নিধন, পূর্ব বাংলা স্বাধীন এ জাতীয় শিরোনামে বিদেশী পত্রিকাগুলি প্রথম দিনের খবর প্রকাশ করে। সারা বিশ্বের রেডিও টেলিভিশনেও তা প্রচার হতে থাকে। ঐ বিদেশী পত্রিকাগুলি পাক-বাহিনীর নির্মমতার খবরও নিয়মিত প্রচার করতে শুরু করে। ঐ খবরগুলি সারা বিশ্বের বিবেককে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়।
কিন্তু অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ বিদেশী কোন পত্রিকা হাতে না পাওয়ায় সীমিত সংখ্যক রেডিওতে কলকাতার আকাশবানী এবংবি.বি.সি’র খবর রাত্রিবেলায় কোন গোপন স্থানে একত্রে বসে শব্দ কমিয়ে শুনতেন প্রতিদিন আর তাতেই তাঁরা উৎসাহিত হতেন। পাবনা জেলার পাকশীতে একটি বাজার সন্নিকটস্থ জঙ্গলে সন্ধ্যায় গ্রামবাসী গোপনে আকাশবাণী বি.বি.সি’র খবর শুনতেন। ঐ বাজার ১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত “বিবিসি বাজার” হিসেবে পরিচিত।
পাক-বাহিনীর নির্মমতায় অতিষ্ট হয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি নর-নারী শিশু দেশত্যাগ করে পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ঐ এক কোটি মানুষের দেশত্যাগের ছবি বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশ হলে তা সারা বিশ্বের মানুষের চিত্তকে আলেড়িত করে।
পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের নির্মমতা দেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী দেশত্যাগী এককোটি বাঙালির জন্য পশ্চিম বাংলা জুড়ে অসংখ্য রিফিউজী ক্যাম্প গড়ে তুলে শরণার্থীদের আহার, বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসেন। এই শরণার্থী শিবিরগুলির সচিত্র বিবরণও বিদেশী পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত হতে থাকে।
অপরদিকে জননেতা তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং ক্যাপ্টন মনসুর আলী খোন্দকার মোসতাক সহ যুদ্ধকালীন অস্থাযী মন্ত্রীসভা গঠন করে মুজিব নগর থেকে সশস্ত্র লড়াই পরিচালনার জন্য যুবকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দানের জন্য ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে সে ব্যবস্থাও সম্পন্ন করেন। ভারতের সেনাবাহিনী গোপনে নানা স্থানে হাজার হাজার দেশত্যাগী তরুণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্রসহ দেশের অভ্যন্তরে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠায়। এভাবে ক্রমান্বয়ে মুক্তিযুদ্ধ সুসংবদ্ধ হতে থাকে।
মুজিবনগর সরকারের সমর্থনে মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দল ও ব্যক্তির উদ্যোগে কলকাতা থেকে অসংখ্য বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হতো এবং দেশের আভ্যন্তরীণ যুদ্ধের খবর প্রকাশিত হতো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সহ পুঁজিবাদী বিশ্বের নানা দেশের সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করলে ব্যাপক কুটনৈতিক অভিযান পরিচালনা করেন ভারত ও মুজিবনগর সরকার। খোন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে আপোষের চেষ্টা নিলে তাকে নজরবন্দী করে রাখা হয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব একজন সাবেক বিচারপতিকে দেওয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকা, চীনের ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি এই মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তখন ভারতের কুটনীতিকদের এবং ন্যাপ ও সিপিবির চেষ্টায় সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নতুন মাত্রা অর্জন করে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পন করে।
এক অসাধারণ বিজয় অর্জন করলো বাঙালি জাতি। আর এই বিজয়ের পেছনে ছিল এক. সমগ্র বাঙালি জাতির লৌহদৃঢ় ঐক্য, দুই. সমগ্র বিশ্বের গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা, তিন. মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব এবং চার. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
এভাবেই চিত্রিত করা যায় মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের অবিস্মরণীয় ভূমিকা।