কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সুগন্ধি ‘কালোজিরা’ ধান। বেশি খরচের তুলনায় লাভ কম হওয়ার কারনে এই ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
তবে সরকারিভাবে কৃষকদের ধান আবাদে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রদর্শনী প্লট প্রকল্প গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথ থেকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় কালো জিরা ধান যা স্থানীয় ভাষায় ‘গুরা’ ধান হিসেবে বেশ পরিচিত। এক সময় কৃষকরা বিভিন্ন ধানের পাশাপাশি এই কালো জিরা ধানের চাষও করত। কিন্তু অতিরিক্ত খরচ হিসেবে লাভের অংকটা কম হওয়ায় কালো জিরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। আর এই কালো জিরা ধানের জায়গা দখল করে নিয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান।
এই সুগন্ধি চিকন চাল দিয়ে তৈরি হয় পিঠা-পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ আরো সুস্বাদু মুখরোচক নানা ধরনের খাবার। এছাড়া সনাতন ধর্মালম্বীদেরও বিভিন্ন পূজায় বিভিন্ন রকম খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই কালো জিরা ধানের ‘চিকন চাল’।
ফলে সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এই চাল। সরেজমিনে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্র আমন ধানের চাষ। কালো জিরা ধানের চাষ একেবারেই নেই বললেই চলে। সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, বারৈয়াঢালা, শিবপুর, সৈয়দপুর, ইদিলপুর, বশরতনগর, মহানগরসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে বুঝা গেল বিলুপ্তিতে এই কালো জিরা ধানের চাষ।
এই ধান চাষ নিয়ে কথা হয় কৃষক জয়নাল আবেদীনের সাথে। তিনি জানান, আমরা আরো ১০ বছর আগে আমন চাষের পাশাপাশি গুরা ধানের (কালো জিরা) চাষও করতাম। কিন্তু খরচ বেশি হিসেবে লাভটা কম হওয়ায় এই চাষ এক হিসেবে বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে মাত্র ৮ শতক জমিতে গুরা ধানের চাষ করেছি, পাশাপাশি ১২০ শতক জমিতে বি-আর ২২ এর চাষ করেছি।
তিনি আরো বলেন, এখন কৃষকরা ওই চাষ করেনা বললেই চলে। যা দু’একজন করে তাও বিক্রি করার উদ্দেশ্যের চেয়ে ঘরে নিজেদের খাওয়ার জন্য করে। গুরা ধান থেকে তুলনামূলক আমন চাষে লাভ বেশি ও খরচ কম হওয়ায় সবাই এই চাষে আগ্রহী।
৬০ বছর বয়সী শাহজাহান নামে আরেক কৃষক জানান, গুরা ধানের (কালোজিরা ধান) চাল অন্যান্য চালের তুলনায় দামও বেশি। প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা। আর তাছাড়া এখন কেউ কালোজিরা ধান তেমন একটা করে না।
কারণ আমন ধানের চাষ করে যে জমিতে ১০ টন ধান পাওয়া যায় একই জমিতে কালোজিরা ধান চাষ করলে পাওয়া পাওয়া যাবে ৬ টন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ জানান, কৃষকদের কালো জিরা ধান চাষে আগ্রহ নেই। কারণ এই ধান চাষে খরচ বেশি কিন্তু ধান উৎপাদন হয় কম। তারপর সীতাকুণ্ডের কিছু কিছু জায়গায় কৃষকরা কালো জিরা ধানের চাষ করছে।