আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি রাজ্যে টর্নেডোর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে নিহত হয়েছে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ।
গতকাল শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেনটাকিতে টর্নেডো ২০০ মাইলেও বেশি বিস্তৃত একটি গমনপথ ধরে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু ধ্বংস করে রেখে গেছে।
কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার জানান, শুক্রবার রাতে অন্তত চারটি টর্নেডো কেনটাকির বিভিন্ন অংশে তাণ্ডব চালায়, এতে এক ডজনেরও বেশি কাউন্টিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাথমিক টর্নেডোটি রাজ্যটির ভেতর দিয়ে ২২৭ মাইলেরও (৩৬৫ কিলোমিটার) বেশি পথ অতিক্রম করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বেশিয়ার বলেন, “যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তেমনটি কখনো দেখিনি আমি। ৫০ জনেরও বেশি কেনটাকিয়ানসকে আমরা হারিয়েছে এটি আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত। আমি এখন এটি নিশ্চিত এই সংখ্যাটি ৭০ জনেরও বেশি। দিন শেষ হওয়ার আগে এটি একশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।”
তিনি জানান, জরুরি উদ্ধারকাজে সহায়তা করার জন্য ১৮৯ জন ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কেনটাকির পশ্চিমাংশের মেফিল্ড শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ হাজার বাসিন্দার ছোট এই শহরটিতে কেনটাকি প্রতিবেশী রাজ্য ইলিনয়, মিজৌরি ও আরকানসয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার জানান, টর্নেডো এই এলাকার একটি মোমবাতি কারখানাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেছে, ওই সময় সেখানে প্রায় ১১০ জনের মতো ছিল; কারখানাটির ছাদ ভেঙে পড়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
কারখানাটির ভেতরে থাকা কিয়ানা পারসন্স পেরেজ জানান, শ্রমিকরা বাতাসের শব্দ পায় ও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এর উপস্থিতি অনুভব করে তখন বিদ্যুৎ চমকও শুরু হয়, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাদ ধসে পড়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, মেফিল্ডের কেন্দ্রস্থলের পাকা ভবনগুলো ভেঙে পড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, কাছে পার্ক করা গাড়িগুলো ইট ও ধ্বংসাবশেষের নিচে প্রায় চাপা পড়ে আছে।
টুইটারে আসা ছবিতে দেখা গেছে, মেফিল্ডের গ্রেভস কাউন্টির আদালত ভবনের ছাদ ভেঙে পড়েছে।
বেশিয়ার জানিয়েছেন, শনিবার ভোররাতে কেনটাকির ৫৬ হাজারেরও বেশি লোক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। রাজ্যটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি।
রাতে ধারাবাহিক কয়েকটি বজ্রঝড় থেকে টর্নেডোগুলির উৎপত্তি হয়। এরমধ্যে আরকানসর উত্তরাঞ্চলে উৎপত্তি হওয়া একটি ‘সুপার সেল’ ঝড়ও ছিল। এই ঝড়টি আরকানস থেকে মিজৌরি, টেনেসি ও কেনটাকিতে প্রবেশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ রজার এডওয়ার্ড বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি এগিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি প্রাণঘাতী টর্নেডো সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে একটি সম্ভবত অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রাণঘাতী টর্নেডোটি এর অংশ ছিল।”
ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের অপারেশন্স চিফ বিল বান্টিং জানিয়েছেন, অন্তত পাঁচটি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা টর্নেডোর তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরকানসর স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যটির উত্তরাঞ্চলে মিজৌরির সীমান্তবর্তী মনেট এলাকায় টর্নেডোর আঘাতে একটি নার্সিং হোমের ছাদ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে অন্তত একজন নিহত ও আরও পাঁচ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
এর কয়েক মাইল দূরে রাজ্যটির লিচভেল এলাকায় একটি দোকান ধ্বংস হয়েছে ও একজন নিহত হয়েছেন।
ইলিনয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে সেইন্ট লুয়িস শহরের কাছে এডওয়ার্ডসভিলের ওপর দিয়ে টর্নেডো ও প্রবল ঝড় বয়ে যাওয়ার সময় ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের একটি গুদামের ছাদ আংশিক ধসে পড়ে, এতে বহু লোক ভেতরে আটকা পড়েছেন।
টেনেসিতে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন বলে রাজ্যটির ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির মুখপাত্র ডিন ফ্লেনার জানিয়েছেন।
মধ্যরাতের কিছুক্ষণ পর ঝড়ের মধ্যে কেনটাকির পশ্চিমাঞ্চলে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে, তবে হতাহতের কোনো খবর হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, ইলিনয়, কেনটাকি, টেনেসি, মিজৌরি, আরকানস ও মিসিসিপি থেকে টর্নেডো হওয়ার ৩৬টি প্রতিবেদন পেয়েছে তারা।