চট্টগ্রামঃ
মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির শ্রেষ্ঠ ইতিহাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমাদের, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা যদি এ ইতিহাস লেখার দায়িত্ব নেন, তবেই সত্য ইতিহাসটা বের হয়ে আসবে।
এ দেশের প্রতি, নতুন প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কানাডা প্রবাসী সাইফুল আলম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই লিখেছেন। এ দায়বোধ যদি প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা অনুভব করেন, তবে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম চৌধুরী রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের অবিদিত ইতিহাস, বাংলাদেশের ওয়ারকোর্সেস অফিসার’, ‘৪০ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স থেকে বাংলাদেশ হাসপাতাল’, ‘মুক্তিযুদ্ধ : ৮ বাঙালি নৌ সেনার বীরত্বগাথা’ এবং ‘তোমার পতাকা যারে দাও’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার ডা. মাহফুজুর রহমান ও চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লায়ন চৌধুরী শামীম মোস্তফা। অনুভূতি প্রকাশ করেন লেখক সাইফুল আলম চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিফাত মোস্তফা।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পরম গৌরবের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর কোনো বই রচনা করা সম্মানের। লেখক তার চারটি গ্রন্থে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন নিজের অভিজ্ঞতা। চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারা তাদের তৎকালীন অভিজ্ঞতাগুলো যদি তুলে ধরেন, তাহলে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচিত হতে পারে। যেটি পড়ে নতুন প্রজন্ম উপকৃত হবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই প্রকাশিত হয়, কিন্তু আগ্রহী ক্রেতা কিংবা পাঠকের সংখ্যা খুব কম। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গ্রন্থ রচনায় প্রকাশকদের তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। এক্ষেত্রে যে প্রকাশনা থেকে চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে, সেই প্রকাশকদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। দেশের প্রতি দায়বোধ থেকে তারা এটি করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, লেখক সাইফুল আলম চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে হাতে অস্ত্র ধরেছিলেন দেশ স্বাধীনের জন্য, আজ সেই হাতে কলম ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায়। আমি গর্ববোধ করি, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেবর মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি থামবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা লিখতে থাকলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। কারণ এটি ইতিহাসের বিরল ঘটনা।
মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতিহাস বিকৃতি কথাটা আমি মানি না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হবে আরও ৫০ বছর পর। আমরা সবাই তথ্য দিয়ে যাচ্ছি। ইতিহাস রচনা করবে নতুন প্রজন্ম। লেখকের বইগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে, প্রতিটি বই অসম্ভব তথ্য সমৃদ্ধ। গবেষণার কাজে লাগবে। তবে আমার পরামর্শ হল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে হলে গ্রামে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রচুর তথ্য রয়েছে আজাদী পত্রিকায়। আমি নিজেও গবেষণা করতে গিয়ে আজাদীর শরণাপন্ন হয়েছি।
মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু বলেন, লেখক সময় নিয়ে দক্ষতা নিয়ে বইগুলো রচনা করেছেন। প্রবাসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের উপর বই লেখা দুরূহ কাজ। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনাও খুব কঠিন। কেননা কোনো তথ্য উপাত্ত এতটুকু ভুল হলে আগামী প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকতে হবে।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রবাসে থাকলেও বাংলার মাটিতে আমার শেকড় রয়ে গেছে। নিজের দায়বদ্ধতা থেকে আমি বইগুলো লিখেছি। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সঠিক ইতিহাস তুলে দেওয়ার জন্য কাজটি করেছি।
লায়ন চৌধুরী শামীম মোস্তফা বলেন, লেখক সাইফুল আলম চৌধুরীকে ধন্যবাদ একারণে যে, তার রচিত বইগুলো পড়ে নতুন প্রজন্ম উপকৃত হবে। সঠিক ইতিহাস জানবে, পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের অনুভূতি রচনায় উদ্বুদ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম।
অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট আবৃত্তি মিল্পী মিলি চৌধুরী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রমি বড়ুয়া ও চৈতী দে।