চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
হানাহানি, সংঘাত ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইউপি নির্বাচনে বৃহস্পতিবারের ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে কেন্দ্র দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একদিনেই ঝরে গেল ৬ প্রাণ।
ভোটগ্রহণের সময় নির্বাচনী সহিংসতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়িতে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনজন, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সংঘর্ষে একজন, কক্সবাজার সদরের ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন ও ফটিকছড়িতে দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে রায়পুরার উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়িতে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার বাঁশগাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও বাঁশগাড়িতে ভোটগ্রহণ চলছে।
নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ি গ্রামের হিকিম মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন মিয়া (৪৫), একই এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৪৫) ও হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭)। এর মধ্যে সালাউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থক। নিহত দুলাল বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আশ্রাফুল হকের সমর্থক।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে জেলার রায়পুরা উপজেলা আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের করিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে সাইফুল নামে একজনের মাথা ফেটে যায় এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রায়পুরা থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, রাতে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত তিনজনের মধ্যে দুলাল মিয়ার লাশ রায়পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, জাহাঙ্গীরের লাশ নরসিংদীর জেলা হাসপাতালে ও সালাউদ্দিন মিয়ার লাশ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
বাঁশগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইউসুফ মিয়া বলেন, রাতে নির্বাচনী সহিংসতায় ঘটনাস্থলে একজন নিহতের কথা শুনেছি। নিহতের সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানান ওসি।
মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতের নাম শাওন আহমেদ (২৫)। তিনি উপজেলার ভল্লবেরকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।
দুপুর আড়াইটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সালাউদ্দিন মোল্লা। তিনি জানান, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর ১২টার দিকে একদল বহিরাগত হঠাৎ করেই ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে বহিরাগতদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে জয় মিয়া, শাওন আহমেদ ও নাজমুল নামের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় মানিকারচর গ্রামের শামিম, শুভ, আবুল, নাজমুল, রিপন, আলাউদ্দিন, সাহেদসহ ৩০ জন আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় মানিকারচর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নাজমুল হাসান মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন যে, ভোট কেন্দ্রে বহিরাগতরা প্রবেশ করে ভোট দিচ্ছে। এ ঘোষণার পরই ভোট কেন্দ্রে উত্তেজনা শুরু হয়। তারপরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ইমামকে আটক করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রশাদের চর এলাকায় নৌকা প্রতীকের লতিফ সরকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
হামলায় আহত হুমায়ন কবির অভিযোগ করেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির জন্য এ হামলা চালায়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমর্থকদের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে।
মেঘনা থানার ওসি আবদুল মজিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে মেঘনার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার সদরের ভোট কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আক্তারুজ্জমান পুতু (৩৫) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশসহ সাতজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার খুরুশখুল তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই মেম্বার প্রার্থী শেখ কামাল ও বাবুলের সমর্থকদের গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
নিহত খুরুশকুল ১নং ওয়ার্ডের তেতৈয়া এলাকার মমতাজ আহমেদের ছেলে এবং মেম্বার প্রার্থী শেখ কামালের চাচাত ভাই বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গোলাগুলির ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
এদিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দুই ইউপি মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোহাম্মদ শফি (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।