চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে শুরু হয়ে এ সড়কটি শেষ হবে কক্সবাজারের টেকনাফে।এটি বাংলাদেশকে যুক্ত করবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে।
এ সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসি (স্মেক)। সাগরের তীর ঘেঁষে তৈরি হওয়া প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের এ সড়কই হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ।
মিরসরাই-সীতাকুণ্ড থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে-মিরসরাই-সীতাকুণ্ড কক্সবাজার ফোর লেন মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প।
এর একটি অংশ হচ্ছে, সীতাকুণ্ড থেকে মুহুরী সেচ প্রকল্প হয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর বিকল্প সড়ক নির্মাণ ও অপর অংশ হচ্ছে শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলবর্তী অঞ্চল দিয়ে মেরিনড্রাইভ নির্মাণ।
সীতাকুন্ড থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে বঙ্গোপসাগরের ১০০ মিটারের মধ্যে। এতে সীতাকুন্ড- থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ বাড়বে।
এ সড়কের সাথে উপকূলীয় এলাকা ছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ও মিরসরাই ইকোনোমিক জোনকে সম্পৃক্ত করা হবে। এ অঞ্চলে পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ সড়ক।এছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হওয়া অপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যও নতুন সুযোগ নিয়ে আসবে।
এ মেরিন ড্রাইভ বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দূরত্ব কমাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এখন সড়কপথে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ নির্মিত হলে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় যাওয়া সম্ভব হবে।
বর্তমানে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব সড়কপথে ১৬০ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক আগেই নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে এই মেরিন ড্রাইভ শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই নয়; দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের জিডিপিতে এক শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই মেরিন ড্রাইভ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এই সড়কটি উপকূলীয় অনুন্নত এলাকার জীবনযাত্রা পাল্টে দেবে। ব্যাপক শিল্পায়নের পাশাপাশি আবাসন এবং পর্যটনেও অকল্পনীয় ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম এ মেরিন ড্রাইভের মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা চলছে। এতে একশ’ বছরের সর্বোচ্চ ফ্লাড লেভেল এবং বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাগুলো বিবেচনায় রাখা হবে। এটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময়ে উপকূলকে দেবে সুরক্ষা। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কটি হবে সামগ্রিকভাবে পর্যটকবান্ধব।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। পুরো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত মেরিন এক্সপ্রেসওয়ে কোন পথে যাবে তা চূড়ান্তভাবে এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মিরসরাই মুহুরী সমুদ্র উপকূল থেকে সীতাকুন্ড- হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর নেভাল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী, বাঁশখালী, পেকুয়া, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল সমুদ্র উপকূল হয়ে কক্সবাজার শহরে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কে সংযুক্ত করার বিষয়ে সমীক্ষা চলছে।
এ মহাসড়কের গড় উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। ২৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চট্টগ্রাম অংশে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে পড়বে ১৫০ কি.মি.। এটি কক্সবাজার-টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত নির্মিত ৮০ কি.মি. মেরিন ড্রাইভওয়ের সাথে ফোর লেইনে উন্নীত হয়ে যুক্ত হবার কথা রয়েছে।
সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে শুধু পর্যটন শিল্প থেকেই বছরে আয় হবে হাজার কোটি টাকা। কাঁচা পণ্যের ব্যবসা, ব্লু ইকোনমি ও সামুদ্রিক শিল্প বিকাশে মেরিন ড্রাইভ সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেরিন ড্রাইভের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে।একইসাথে সুরক্ষিত হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল।