চট্টগ্রামঃ
নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানা হোয়াক্যাং এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিনের বাদশা পরিচয়ে ২৮,৩৬,০০০ টাকা আত্মসাৎকারী মোঃ আব্দুল মান্নান (৫৮), মোঃ জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩), আবু তৈয়ব (৫৮) নামে ৩ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২.৩০ মিনিটের সময় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানান কোতোয়ালী থানার এসআই মেহেদী হাসান।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানাধীন আরব সিকদার বাড়ী, জাফরাবাদ এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে মোঃ আব্দুল মান্নান (৫৮) ও মোঃ আব্দুল মান্নানের ছেলে মোঃ জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩) এবং মৃত আব্দুল হাশেম প্রঃ হাশেমের ছেলে আবু তৈয়ব (৫৮),বর্তমানে- নগরীর চাঁন্দগাও থানাধীন বাসা নং-৫৯, চাঁন্দগাও আবাসিক, বি-ব্লক, এর বাসিন্দা।
অভিযান পরিচালানা করেন,এসআই মেহেদী হাসান, এসআই মিজানুর রহমান চৌধুরী, কনস্টেবল আলী হোছাইন ও শাহজাহান ।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন, পিপিএম জানান, আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আসামী আবু তৈয়ব স্বর্ণের দোকানে চাকুরি করে। সে স্বর্ণ বিক্রয় করতে আসা বিভিন্ন কাস্টমারের সমস্যা শুনে তাদেরকে আসামী মোঃ আব্দুল মান্নানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সে নিজেকে জ্বীনের বাদশা বলে পরিচয় দেয় ও সে জ্বীন পালে বলে জানায়। ভুক্তভোগীকে জ্বীনের চালান দিতে ডিম, চাউল, জিনকাটা মেডিসিন, শুকরের পিত্তথলি, সাদা কাপড়, কালো কাপড়, লাউ লাগবে বলে ভুক্তভোগীর কাছ বিপুল পরিমান টাকা নেয় ধাপে ধাপে নানা অজুহাতে । আসামীগণ দীর্ঘদিন যাবৎ এ ধরনের পেশার সাথে জড়িত।
তিনি আরো জানান, মামলার সুত্র ধরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানা হোয়াক্যাং এলাকায় অভিযান চালিয়ে জ্বীনের বাদশা পরিচয়ে ২৮,৩৬,০০০ টাকা আত্মসাৎকারী ৩ জনকে আটক করা হয়।
আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। মোঃ আব্দুল মান্নান নিজেকে জীনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।এর পর জীন চালানের কথা বলে তাদের নিকট মোটা অংকের টাকা আদায় করে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, জনৈক মোঃ আবুল হাছান সহিদ দীর্ঘ ২২ বছর পর সৌদি আরবে থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসে। সৌদি আরব মক্কা শরীফের পাশের আবাসিক হোটেলে ব্যবসা করত। সৌদি আরবে তিনি ৫টি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করত। আবাসিক হোটেল ব্যবসাটি সৌদি আরবের স্থানীয় আদনান সাঈদ আল সাদী নামক (কপিল) এর নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হত।
সৌদি আরবের নিয়ম মোতাবেক সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীর নামে ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা হত। সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী মোঃ আবুল হাছান সহিদকে ছুটি কাটানোর জন্য বাংলাদেশে পাঠায়। তিনি বাংলাদেশে ছুটি শেষে পুনরায় সৌদি আরবে ফেরৎ যেতে চাইলে দেখেন যে, তার ভিসাটিতে সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ সীলমোহর দেওয়া।
তিনি আর সৌদি আরবে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে বুঝতে পারেন, সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২) পরিকল্পিতভাবে তার ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা এবং হোটেল সমূহ আত্মসাৎ করার জন্য তাকে সৌদি আরব প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়াছে।
তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা হারিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে জীবন যাপন করতে থাকে। গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলিস্থ স্বর্ণের দোকানে তার স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য গেলে স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণ বিক্রয়ের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরে বর্ণিত ঘটনা খুলে বলেন।
উক্ত বিষয়ের সমাধান করার একটা উপায় আছে বলে তার মোবাইল নম্বরটি নেয় তারা । পরে আবু তৈয়ব মোবাইলে ফোন করে মোঃ আবুল হাছান সহিদকে কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘীর পাড়স্থ হোটেল আল ফাতাহ এর ৩য় ৩লায় নিয়ে যায়। সেখানে মোঃ আব্দুল মান্নানের সাথে পরিচয় করে দেয়। সে নিজেকে একজন পীর ও জ্বীন পালে বলে জানায়।
ধর্মীয় আধ্যাতিক শক্তি এবং জ্বীনের মাধ্যমে সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২)কে বাংলাদেশে এনে দিতে পারবে এবং বাংলাদেশে এসে তার সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ দিয়ে যাবে বলে জানায়। উক্ত টাকা এবং সৌদি নাগরিককে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হলে শুরুতে ২,০০০০০(দুই লক্ষ) টাকা এবং ৩ ভরি স্বর্ণ ও আমেরিকান এক হাজার টাকার ডলার দিতে হবে। পরে তাকে কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘী শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুয়ে শপথ করায়।
তিনি উক্ত বিষয়টি কারো কাছে বললে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে এবং তার পালিত জ্বীন তাকে গলা চিপে হত্যা করবে বলে জানায়। এমনকি তার সন্তানদের উপর বড় ধরনের বিপদ আসিবে বলে জানায়। পরে বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করিতে হবে বলে প্রথমে ২,০০০০০(দুই লক্ষ) টাকা এবং ৩ ভরি স্বর্ণ নেয়।
পরবর্তীতে উক্ত সৌদি নাগরিককে এনে দিবে বলে গত মার্চ-সেপ্টেম্বর/২০২১ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নগদ ও বিকাশ নাম্বারে সর্বমোট-২৮,৩৬,০০০(আটাশ লক্ষ ছয়ত্রিশ হাজার) টাকা নেয়। পরে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে মোঃ আবুল হাছান সহিদ আসামীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় এজাহার দায়ের করে।