চট্টগ্রামের সময় ডেস্কঃ
মহানগরীর পল্টন থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সুইসডধাম কোম্পানির পরিচালক কাজী আল-আমিনসহ ১৭ জন’কে করেছে র্াব-৪।
অভিযান কালে প্রতারণায় ব্যবহৃত ২ টি ল্যাপটপ, ১ টি প্রজেক্টর, কোম্পানীর ব্যবহৃত ২ টি সীল, কোম্পানীর ব্যানার ২ টি, বিভিন্ন ধরনের ৪ টি ডায়েরী ও খাতা, ১ টি রেজিষ্টার, কোম্পানীর ১২৫ টি লিফলেট, প্রতারণায় ব্যবহৃত সুইসড্রাম কোম্পানীর ভুয়া ঔষধ/প্রসাধনী সামগ্রী, সুইসড্রাম কোম্পানীর ২৫ সেট ডিসট্রিবিউটর ওয়ার্কিং ফাইল, ২৩ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ১,২৭,১৯৫ টাকা জব্দ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ২১ সেপ্টেম্বর রাত ০৮:৩০ মিনিট হতে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০:৩০ টা পর্যন্ত ১৫ ঘন্টা মহানগরীর পল্টন থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার কাজী আলামিন (৩৪), ব্রাম্মনবাড়ীয়া জেলার মোঃ সালাউদ্দিন (৪৬),ময়মনসিংহ জেলার শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ (৫৯),নারায়নগঞ্জ জেলার মনিরা ইয়াসমিন (৪৩) ও মোঃ জাহিদ হাসান (৪২),মাদারীপুর জেলার মোঃ স্বপন মিয়া (৩৮),কুমিল্লা জেলার মোঃ শাহজাহান (২৫),টাঙ্গাইল জেলার মোঃ মিজানুর রহমান (৫০),মাদারীপুর জেলার মোঃ বাদশা ওরফে সুলাইমান (২৬), বরিশাল জেলার ইমাম হোসাইন (৩৫),পটুয়াখালী জেলার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আনারুল ইসলাম (৪২),চাঁদপুর জেলার মিজানুর রহমান (৩৯),নোয়াখালী জেলার মোঃ ফারুক উদ্দিন (৪৭), ঢাকা জেলার আঞ্জমানআরা বেগম (৫২) ওশেখ রবিন (৩৩), বরিশাল জেলার ইমাম হোসাইন (৩৫) এবং পাবনা জেলার মোছাঃ আছমা বেগম (৩৫)।
র্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র অতি সাম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ও ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দেশ জুড়ে সমালোচিত হয়েছে ই-কমার্স নামক ব্যবসা।
এরই প্রেক্ষিতে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহানগরীর পল্টন থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সুইসড্রাম কোম্পানীর অন্যতম পরিচালক কাজী আল-আমিন (৩৪)সহ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সুইসড্রাম কোম্পানী মধ্যশিক্ষিত বেকার ও নিরীহ যুবক এবং শিক্ষিত সরল শ্রেণীর লোকজনদের মোটিভেশনাল বক্তব্য প্রদান ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সদস্য হিসেবে সুইসড্রাম এ্যাপস্-এ একাউন্ট খোলার মাধ্যমে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ঘন ঘন তাদের অফিস পরিবর্তন করত। প্রতারক চক্রটি সুইসড্রাম কোম্পানীর নামে S-factor নামে একটি ঔষধ (সর্ব রোগের মহৌষধ) যা ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও হার্টের ঔষধ বলে প্রচারনা চালিয়ে আসছিলো।
এমনকি উক্ত ঔষধ করোনা প্রটেক্ট্রিভ হিসেবে কাজ করে বলেও প্রচার করে এই কোম্পানী। সুইসড্রাম কোম্পানীতে নতুন সদস্যদের ৫ টি ক্যাটাগরির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। ১ ও ২ ক্যাটাগরি ক্যাটাগরিতে ৪,২০০-৬,২০০ টাকার বিনিময়ে ০১ প্যাকেট ঔষধ ও ৩, ৪ নং ক্যাটাগরিতে ২৬,২০০-৫৮,০০০ টাকার বিনিময়ে ৬-১৪ প্যাকেট ঔষধ এবং ৫ নং ক্যাটাগরিতে ১,১৭,০০০ টাকার বিনিময়ে ২৮ প্যাকেট ভুয়া ঔষধ প্রদান করে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করে আসছে। উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নির্দিষ্ট কোন সাইনবোর্ড ও ঠিকানা ব্যবহার করত না।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, কোম্পানীর কার্যসমূহ সম্পূর্ণভাবে প্রতারনার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে। নিরীহ, অসহায়, সরল ব্যক্তিদের স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন এবং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক পার্সেনটেজ অর্জনের প্রলোভন দেখানে হতো। সুইসড্রাম কোম্পানী তাদের প্রচারিত ঔষধ S-factor (সর্বরোগের মহৌষধ) ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী প্রসাধনী সামগ্রী উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে যা শরীর ও ত্বকের ব্যবহারের প্রেক্ষিতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর এমনকি যা ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু সংঘবব্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রতারক সংগঠনের কার্যপদ্ধতি টার্গেট/ভিকটিম/সদস্য সংগ্রহঃ
টার্গেট বা সদস্য সংগ্রহঃ প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী বা সদস্য রয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার ও অস্ব”ছল যুবক-যুবতী এমনকি শিক্ষিত লোকজনকে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারন সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে। নিয়মিত গমনাগমনকারী এবং কথাবার্তায় পটু, আর্থিকভাবে মোটামুটি স্ব”ছলদেরকে সদস্য সংগ্রহের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাদেরকে মোটা অংকের টাকা প্রদানে বাধ্য করে এবং নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
ভুয়া পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় প্রদানঃ
গ্রেফতারকৃত কাজী আল-আমিন (৩৪) দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানীর নতুন সদস্যদের নিকট প্রবাসি এবং বিভিনড়ব দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। তাদেরকে প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ন বিভিনড়ব পদে মনোনয়ন প্রদান করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ করে এবং তথ্যাদি সংগ্রহ করে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। এদেরকে প্রতি গ্রাহক/টার্গেট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হতো এবং অধিক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখানো হতো।
প্রতারণার কৌশলঃ
সভা/সেমিনার/মোটিভেশনাল ওয়ার্কশপ/আকর্ষনীয় লাঞ্চ ও বুফে ডিনার পার্টির আয়োজনঃ ধৃত প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জৌলুসপূর্ণ ও আকর্ষনীয় রেষ্টুরেন্টে ভিকটিমদেরকে নিয়ে এসে প্রতারণা মূলক সভা/সেমিনার/মোটিভেশনাল ওয়ার্কশপ/আকর্ষনীয় লাঞ্চ ও ডিনার পার্টির আয়োজন করত। অসহায়, নিরীহ অর্ধ-শিক্ষিত এমনকি শিক্ষিত শ্রেণীর ভিকটিমরা এধরনের ঝাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রলুব্ধ হয়ে খুব সহজেই তাদের প্রতারনার ফাঁদে পা দিত।