অনলাইন সময় ডেস্কঃ
করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে নেই ডেঙ্গুর হানা। চলতি আগস্ট মাসের ২২ দিনে অর্ধশত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে মহানগর ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছে ৩১ জন। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২৬ জন রোগী।
তবে শনাক্তদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। হাতে গোনা কয়েকজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার। তিনি জানান , চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগর ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলতি মাসের ২২ দিনে ৩১ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে।
জুলাই মাসে ৭ জন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি ২ জনের মৃত্যু হয়। তবে এ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যুর তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চলতি মাসে শনাক্ত হওয়া ৩১ রোগীর মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন বলে জানান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস।
বর্তমানে ১০ জনের মতো রোগী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতাল, মেডিকেল সেন্টার, এভারকেয়ার হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতালসহ মহানগরের বেশ কয়টি হাসপাতাল থেকে একজন-দুজন করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই-একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩ জন রোগী চিকিৎসা নেন বলে জানান হাসপাতাল নির্বাহী কমিটির ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ। বর্তমানে একজন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রিপোর্টিং করলেও চমেক হাসপাতালের তথ্য পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ফলে সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রদত্ত তথ্যে চমেক হাসপাতালের তথ্য থাকে না।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে প্রায় ২০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন চলতি মাসেই। বর্তমানে ৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া মোট রোগীর সিংহভাগই চলতি মাসে শনাক্ত হয়েছে। সে সূত্রে বলা যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। অবশ্য, প্রস্তুতি হিসেবে এরই মাঝে মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপের শঙ্কা থাকেই। যার কারণে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ডেঙ্গু কর্নারে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পাওয়া যাচ্ছে না সঠিক চিত্র : করোনার কারণে গত বছরের মতো এবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত ও শনাক্তের সঠিক চিত্র আসছে না বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেলে মহানগর ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ডেঙ্গু শনাক্তের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়মিত হালনাগাদ রিপোর্ট সরবরাহ করত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও শনাক্তের তথ্য প্রতিনিয়ত হালনাগাদ পাওয়া যেত। কিন্তু গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে অন্যান্য সব কার্যক্রম অনেকটা ঢিমেতালে চলছে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা নিয়ে ব্যস্ত। যার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতাল ডেঙ্গু সংক্রান্ত হালনাগাদ রিপোর্ট দিলেও বেশিরভাগ হাসপাতাল নিয়মিত রিপোর্টিং করছে না। এর ফলে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও শনাক্তের বিষয়ে সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। করোনাকালীন অধিকাংশ হাসপাতালের কাছ থেকে ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডা. নুরুল হায়দার ও জেলা কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস।
করোনা সংক্রমণের মাঝেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থেমে নেই উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এবারও মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ঠিকই, তবে বেশিরভাগ ডেঙ্গু পরীক্ষা করেনি বা করাচ্ছে না। অনেকে আবার কোনো পরীক্ষা না করে বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছে। করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়েও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় (চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ) ২ হাজার ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৭ জনের। চমেক হাসপাতালের তথ্য ছাড়া ২০২০ সালে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সঠিকভাবে রিপোর্টিং না হওয়ায় গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রিপোর্টিং ও মনিটরিংয়ের দুর্বলতার কারণে গত বছরের ন্যায় এ বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপের প্রকৃত চিত্র পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।