চকরিয়া প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজার থেকে পথে পথে যাত্রী তুলে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল একটি মাইক্রোবাস নোয়া গাড়ি। ওই নোয়া গাড়িতে যাত্রী ছিল মোট দশজন। তন্মধ্যে একাধিক শিশু, দুই নারী এবং তাদের স্বামীও ছিল।
পথিমধ্যে এক পথচারী নারীকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় গাড়িটি মহাসড়কের পাশের একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা খায়। এর পর কিছুদূর গিয়ে সড়ক থেকে গড়াগড়ি খেয়ে গভীর খাদে ডোবায় গিয়ে পানিতে ডুবে যায়।
এতে এক পথচারীসহ ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয়। এছাড়াও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো দুইজন যাত্রীসহ সর্বমোট সাতজন নিহত হয়েছে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায়।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেন্ডিবাজারস্থ এটিএন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের কাছে আজ শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
চকরিয়া থানা ও মহাসড়কের বানিয়ারছড়া হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশু, তিন নারীসহ সাতজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো চারজন যাত্রী। তন্মধ্যে স্বামী-স্ত্রী এবং মা-ছেলেও মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তারা হলেন- কক্সবাজার সদরের ঘোনার পাড়ার প্রদীপ দের স্ত্রী পূর্ণিমা দে (৩০), তাঁর শিশুপুত্র স্বার্থক দে (৩), চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বৈরাগীর খিল গ্রামের স্বামী-স্ত্রী রতন বিজয় দে (৫০) ও মধুমিতা দে (৪০), শংকর রুদ্রের মেয়ে রাণী রুদ্র (২৪), পথচারী নারী হাজেরা বেগম (৫৫)। তিনি ভেন্ডিবাজারের পুকপুকুরিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইলের স্ত্রী।
আহতরা হলেন- নিহত পূর্ণিমা দে’র স্বামী প্রদীপ দে (৪৫) ও তাদের শিশু কন্যা শ্যামলী (৫), মানিকগঞ্জের বাবর আলী (১৮) ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। তন্মধ্যে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী নোয়া (ভক্সি) গাড়িটি (ঢাকা মেট্টো-চ- ১১-৫০৩৮) ফাঁসিয়াখালী ভেন্ডিবাজারস্থ এটিএন পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পৌঁছলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক পথচারী মহিলাকে ধাক্কা দেয়।
এ সময় গাড়িটি সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে সজোরে ধাক্কা খেলে গাড়িটির একটি দরজা ছিটকে পড়ে এবং অন্তত ২০ গজ দূরে গিয়ে গাড়িটি সড়ক থেকে গভীর খাদে ডোবার পানিতে ডুবে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও দুইজন মারা যায়।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রিয়াসাদ আজিম সিদ্দিকী জানান, এই দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো চারজন যাত্রী। তিনজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্যজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশটি হাইওয়ে পুলিশের কাছে রয়েছে। বাকী মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর পরই উৎসুক মানুষের ভিড়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় থানার পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অকুস্থলে ছুঁটে গিয়ে হতাহতদের একে একে উদ্ধার তৎপরতা চালান।
এ সময় গাড়িটি ক্রেন দিয়ে তোলা হয়। এর পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।