চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন এলাকায় হালদার কিনার ধরে একটু হাঁটলেই হঠাৎ চোখে পড়বে লাল টুকটুকে জনবসতি।
চারপাশের প্রকৃতি ও নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা বেষ্টিত মনোরম পরিবেশ দেখে কৌতূহলী পথিক আরেকটু হেঁটে কাছে গেলে দেখতে পাবেন ছোট বড় শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত সারি সারি ঘর। হয়তো দেখতে পাবেন তৃপ্তির হাসি নিয়ে বারান্দায় বসে গল্প করছেন কোন বৃদ্ধা মা কিংবা তসবীহ পাঠ করছেন কোন বৃদ্ধ বাবা।
মধ্যবয়সী কোন গৃহিণীকে দেখা যেতে পারে শীতল পাটি কিংবা জাল বুনতে। জীবিকার উদ্দেশ্যে হয়তোবা কেউ সুনিপুণ দক্ষতায় তৈরি করছেন হাতের তৈরি কোন বস্তু এ সমস্ত আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে পরিকল্পিত বসতি আপনার চোখের সামনে পাবেন সেটি আসলে একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন-ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই শ্লোগানের তাৎপর্যকে ধারণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজ শুরু করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান উপজেলা ভিত্তিক বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যাকে চিহ্নিত করে প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে নজর দেন।
জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন। বিশেষত পুরো জেলাকে কয়েকটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নানাবিধ চ্যালঞ্জ মোকাবেলা করে দুই পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মোট ২ হাজার ২১৬ টি গৃহ নির্মাণ করেন ও হস্তান্তর করেন।
উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারীতে প্রথম পর্যায়ের ১৫ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০ টি ও বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কর্তৃক ১ টিসহ মোট ২৬ টি গৃহ নির্মাণ করা হয় গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নে। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় নিকটবর্তী এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০০ মিটার এলাকার মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির ও বাজার।
উপজেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে। নাগরিক সুযোগ সুবিধার সাথে সম্পর্কিত সকল সরকারি বিভাগ একসাথে এই প্রকল্পটিতে কাজ করছে। বিদ্যুৎ ও পানির সুবিধার আওতায় আনা হয় পুরো আবাসস্থলকে।
এছাড়া ২৬ টি পরিবারের জন্য ইতোমধ্যেই একটি পুকুর খনন করে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে, উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নানাবিধ ফলের গাছ লাগানোর। উপকারভোগীদের কেউ কেউ হস্তশিল্পে পারদর্শী।
তাই তাদের হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণে মহিলা বিষয়ক অফিস ও যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আজ হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন এলাকায় হালদার তীরবর্তী গৃহহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ পরিদর্শন ও সেখানকার ২৬ পরিবারসহ মোট ৩৫০ জনের মাঝে সরকার প্রদত্ত উপহার সামগ্রী (ত্রাণ) বিতরণ করেন।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে। জেলাকে কয়েকটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নানাবিধ চ্যালঞ্জ মোকাবেলা করে দুই পর্যায়ে মোট ২ হাজার ২১৬ টি গৃহ নির্মাণ ও হস্তান্তর করেন। উপজেলা পর্যায়ে হাটহাজারীতে প্রথম পর্যায়ের ১৫টি, দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০টি ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কর্তৃক ১টিসহ মোট ২৬ টি গৃহ নির্মাণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাশাহিদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় যথাসময়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
এ আশ্রয়ণের নানা সুযোগ সুবিধার বিষয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি ও প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।
বিশেষ করে নিকটস্থ গ্রোথ সেন্টারসমূহের সঙ্গে এ ২৬টি পরিবারের জীবিকার সংযোজন করতে আগামী দিনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে ঘর পাওয়া প্রতিটি পরিবার শুধু আশ্রয়ই পায়নি, পেয়েছে সম্মান নিয়ে জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তাও।
পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস.এম জাকারিয়া, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম রাশেদুল ইসলাম, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবু রায়হানসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ।