উখিয়া প্রতিনিধিঃ
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাড়িয়েছে। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ সংখ্যা ১৫ বলে দাবি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মৃত্যুর এ তথ্য জানান বাংলাদেশের ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইয়োহানেস ফন ডেয়ার ক্লাউভ।
এছাড়া আহতের সংখ্যা ৫৬০ জন বলেও জানায় সংস্থাটি। অবশ্যই এর আগে বিকাল ৫টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নিহতের সংখ্যা ১১ জন বলে উল্লেখ করেছেন।
সচিব বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্যাম্প ও স্থানীয় ১০ হাজারের অধিক বসতঘর ও দোকান পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে খুব কম সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন।
তবে কেউ নিখোঁজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের পর এই ব্যাপারে জানা যাবে। কেউ কেউ হয়ত আশপাশের কোনো ঘরে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
এর আগে গত সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পাশের ক্যাম্প ৮ এইচ, ৯, ১০ ও ১১ তে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া সাড়ে ৯ হাজারের অধিক ঘরবাড়ি ও ১২ শতাধিক দোকান পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াতকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসুদ্দৌজা নয়ন।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সবকিছু করা হচ্ছে, যাতে তারা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। তিনি আরো জানান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশীয় সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের এ দুর্ভোগ কাটাতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে মো. শামসুদ্দৌজা বলেন, এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।
এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর গতকাল সকাল থেকে পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পে ফিরতে শুরু করেন ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দলে দলে পরিবারসহ ফিরছেন ক্যাম্পে। এসময় তাদের হাতে ছিল নতুন কাঠ ও বাঁশসহ বিভিন্ন নির্মাণ সরঞ্জামাদি।
এছাড়া আহতদের চিকিৎসাসেবা নিতেও দেখা গেছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। আমরা পরিবারসহ খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুড়ে যাওয়া স্থানেই ফিরেছি। আরেকজন জানান, বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ পাশের ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলাম। সকালে পরিবারসহ ফিরে এলাম।
অগ্নিকাণ্ডে স্বজন হারানো এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে দুই শিশু মারা গেছে বলে জেনেছি। তার মধ্যে একজন ছিল আড়াই বছর বয়সী মুশরফা ও আরেকজন সাড়ে তিনবছর বয়সী তসলিমা।
জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। অনেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবারসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আজাদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত ভাসানচরে স্থানান্তর করলে তারা একটা নিরাপদ বাসস্থান পাবে। স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় কোভিড-১৯ এর সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে।